সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে দেওঘর ট্রেজারি থেকে ৯৬ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগে লালুর বিরুদ্ধে পৃথক ভাবে বিচার হবে। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এই মামলা শেষ করতে হবে ৯ মাসের মধ্যে।
এই রায়ের পরে লালুকে ফের জেলে যেতে হচ্ছে, তা নয়। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে তাঁর আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিজেপি চাইছে, লালুর সঙ্গে জোট ভেঙে বেরিয়ে আসুন নীতীশ কুমার। সে ক্ষেত্রে তাঁকে সমর্থন জোগাবে বিজেপি। আজকের রায় বিহারের রাজনীতিতে সেই সম্ভাবনা ফের উসকে দিয়েছে।
৯০০ কোটি টাকার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে মোট ছ’টি মামলা দায়ের করেছিল সিবিআই। চাইবাসা ট্রেজারির একটি তছরুপ মামলায় লালু জেল খেটেছেন। ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, একই অভিযোগে আর মামলা হবে না। সিবিআই তার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। আজ বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি অমিতাভ রায়ের বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দিয়েছে।
বিহারের জোট সরকারে লালুর ছেলে তেজস্বী উপমুখ্যমন্ত্রী। জেডি(ইউ) মনে করে, আরজেডি নেতাদের দৌরাত্ম্যেই নীতীশের সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে না। এই সুযোগটাই বিজেপি নিতে চায়। জোট ভাঙলেই বিজেপি নীতীশকে সমর্থন দিয়ে সরকারে যেতে তৈরি।
নীতীশ নিজেও এখন নরেন্দ্র মোদীর কট্টর বিরোধিতা থেকে সরে এসেছেন। তবে তিনি জোট ভাঙা নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে নারাজ। ২০১৯-এ বিরোধী জোটের পক্ষে হাওয়া উঠলে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হয়ে উঠতে পারেন কি না, তার জন্য অপেক্ষা করছেন। নীতীশের উপর চাপ বাড়াতে আজ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, ‘‘এ বার নীতীশ কুমারের অবস্থান কী হবে! তাঁর এ বার চোখ খোলায় সময় হয়েছে।’’
গভীর জলে
• জানুয়ারি, ১৯৯৬: চাইবাসায় পশুখাদ্য সরবরাহের ভুয়ো বিল উদ্ধার
• ১১ মার্চ, ১৯৯৬: সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
• ২৭ মার্চ, ১৯৯৬: চাইবাসা ট্রেজারি নিয়ে এফআইআর।
• ২৩ জুন, ১৯৯৭: চার্জশিটে লালুর নামে অভিযোগ
• ৩০ জুলাই, ১৯৯৭: লালুর আত্মসমর্পণ। জেল হেফাজত
• ২০০১: ঝাড়খণ্ডের আদালতে মামলা স্থানান্তরিত
• ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩: লালু-সহ ৪৫ জন দোষী
• ৩ অক্টোবর, ২০১৩: লালুর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। ২৫ লক্ষ জরিমানা।
• ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩: সুপ্রিম কোর্ট জামিন দিল লালুকে
• ৮ মে, ২০১৭: লালুর বিরুদ্ধে নতুন ধারায় মামলার নির্দেশ।
এই পরিস্থিতিতে লালু দিশেহারা। দু’দিন আগেই সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের রেকর্ডিং প্রকাশ্যে আসায় সমস্যা বেড়েছিল। আজ কোর্টের রায়ের পর থেকে ঘরবন্দি লালু ও তাঁর পুত্রকন্যারা। দলের কোনও নেতা মুখ খুলতে চাননি। শুধু মুখপাত্র মনোজ ঝা জানিয়েছেন, আইন আইনের পথে চলবে।
প্রবীণ আইনজীবী রাম জেঠমলানী অবশ্য মনে করেন লালুর কোনও সমস্যা হবে না। জেঠমলানী আরজেডি-র রাজ্যসভা সাংসদ, লালুর আইনজীবীও ছিলেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘অন্য পক্ষ কী করে ভেবে নিল যে এতে লালুর বিপদ বাড়বে, তা বুঝতে পারছি না।’’ লালুর আইনজীবীদের যুক্তি হল, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির একটি মামলায় ২০১৩-তেই লালুকে নিম্ন আদালত দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। ওই বছরেই ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জামিন পেয়ে যান লালু। শুধু ওই মামলাটি নয়, সব মামলাতেই লালু জামিন পেয়েছেন। নতুন যা হল তা হচ্ছে, পাঁচটি মামলাতেই বিচার হবে তাঁর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন:ফটক আটকে ঘরেই লালু প্রসাদ
রাঁচীর সিবিআই দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, চাইবাসা ছাড়াও দেওঘর, দুমকা ও ডোরান্ডা ট্রেজারির মামলা শেষ হয়নি। রাঁচীর সিবিআই দফতরের ডিএসপি অজয় কুমার ঝা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ৯ মাসের মধ্যে পুরো মামলা শেষ করতে হবে। প্রতিটি ট্রেজারির আলাদা আলাদা সাক্ষ্যপ্রমাণ-সহ জরুরি নথি জোগাড় করার কাজ প্রায় শেষ। আশা করা যায় সু্প্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো আগামী ৯ মাসের মধ্যে পুরো মামলা শেষ করে দিতে পারব।’’
পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি কী?
অবিভক্ত বিহারে পশুখাদ্য কেনার ভুয়ো বিল দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন ট্রেজারি থেকে দফায় দফায় প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছিল। অভিযোগের তির ওঠে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র-সহ কংগ্রেস, জনতা দলের কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে। ওই তালিকায় রয়েছেন আইএএস অফিসার, বেসরকারি সংস্থার মালিকও। লালুর বিরুদ্ধে ছ’টি পৃথক মামলা রয়েছে।