পাকিয়ং বিমানবন্দরের রানওয়ে
অনেক টানাপড়েনের পরে পাকিয়ং বিমানবন্দর চালু হয়েছে সিকিমে। কিন্তু আবহাওয়ার খেয়ালিপনায় বাতিল হচ্ছে উড়ান। সমস্যায় পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যাত্রীরা।
যেমন হল বৃহস্পতিবারেও। খারাপ আবহাওয়ার জন্য পাকিয়ংয়ের উড়ান বাতিল করা হয়। স্পাইসজেট যাত্রীদের জানিয়ে দেয়, টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে নিন। নয়তো শুক্রবারের উড়ানের জন্য অপেক্ষা করুন।
ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। সকালে স্পাইসজেটের টিকিট কাউন্টারের সামনে উচ্চগ্রামে তর্কাতর্কি চলে দীর্ঘ ক্ষণ। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্তা অভিজিৎ ঘোষ গ্যাংটক যাচ্ছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘টিকিটের টাকা ফেরত দিয়ে দিলেই সব দায়িত্ব শেষ! এত দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কেন?’’
এ দিনের প্রায় ৭৮ জন যাত্রীর মধ্যে কেউ কেউ টাকা ফেরত নিয়ে চলে যান। কয়েক জন নেন শুক্রবারের উড়ানের টিকিট। কিন্তু অভিজিৎবাবুর মতো বেশির ভাগ যাত্রীই বাগডোগরায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য উড়ান সংস্থাকে চাপ দিতে থাকেন। বাধ্য হয়ে দুপুরে স্পাইস তাদের বাগডোগরার উড়ানে বেশ কয়েক জন যাত্রীকে তুলে নেয়।
অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘আমার টিকিট ছিল পাকিয়ং পর্যন্ত। কিন্তু আমাকে বাগডোগরায় নামিয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে দিতে চায় স্পাইস। সেখান থেকে গাড়িতে পাঁচ ঘণ্টার পথ যেতে হবে। গাড়ির ভাড়া তো দিতে হবে আমার পকেট থেকেই!’’
অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে সপরিবার এই প্রথম কলকাতায় এসেছেন এন বাসুদেব রাও। স্ত্রী, তিন বছরের ছেলে ও শ্যালককে নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে হাওড়া স্টেশনে নেমে সোজা চলে যান বিমানবন্দরে। অনেক দিন আগে থেকেই পাকিয়ংয়ের টিকিট কাটা ছিল। সেই উড়ান বাতিলের পরে স্বামী, স্ত্রী ও বাচ্চাকে স্পাইস নিজেদের বাগডোগরার উড়ানে জায়গা করে দিলেও শ্যালকের জায়গা হয়নি। সেই টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে ইন্ডিগোর উড়ানের টিকিট কেটে বাগডোগরা যান শ্যালক।
বাসুদেব দুপুরে বলেন, ‘‘প্রথমত বিকেলের উড়ানে আমি যখন বাগডোগরায় পৌঁছব, তার পরে পরিবার নিয়ে পাহাড়ি রাস্তায় গাড়িতে করে যাওয়া সম্ভব নয়। আমার গ্যাংটকের হোটেল বুকিংয়ের টাকা নষ্ট হবে। তার উপরে শিলিগুড়িতে আমাকে এক রাত থাকতে হবে। সেই সঙ্গে আছে শুক্রবার গাড়িতে গ্যাংটক যাওয়ার খরচ!’’ বৃদ্ধা মাকে নিয়ে আতান্তরে পড়েন বালিগঞ্জের বাসিন্দা অনুপম দাশগুপ্ত। শেষে তাঁকে এয়ার এশিয়ার উড়ানে বাগডোগরা যাওয়ার টিকিট করে দেয় স্পাইস। তাঁর আশঙ্কা, ১৯ নভেম্বর তাঁদের ফেরার টিকিট কাটা আছে। সে-দিন উড়ান বাতিল হলে ফের সমস্যায় পড়বেন।
উড়ান সংস্থার যুক্তি, আবহাওয়ার জন্য মাঝেমধ্যেই বাতিল করতে হচ্ছে উড়ান। প্রায় এক সপ্তাহ পরে এ দিন পাকিয়ংয়ের উড়ান বাতিল হল। এর মধ্যে প্রতিদিনই ৭৮ আসনের বিমান যাতায়াত করেছে। ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে আবহাওয়া আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উড়ান সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের দফতরে যাঁরা আসছেন, আমরা সতর্ক করা সত্ত্বেও তাঁরা টিকিট কাটছেন। আগামী দু’মাসের উড়ানের প্রায় ৪৫ শতাংশ আসন এখনই ভর্তি হয়ে গিয়েছে।’’
সংস্থা তো বলেছিল, উড়ান বাতিল হলে তারাই এখান থেকে বাগডোগরা নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে গ্যাংটক পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। সেটা করা হচ্ছে কি? উড়ান সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতা থেকে ওড়ার পরে যদি দেখা যায় পাকিয়ংয়ের আবহাওয়া খারাপ, তখন যাত্রীদের বাগডোগরা নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে গ্যাংটক পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু কলকাতা থেকে বিমান না-উড়লে টিকিটের পুরো টাকা
ফেরত দেওয়া অথবা বাগডোগরায় পৌঁছে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে স্পাইসজেট।
এ ভাবে বারবার উড়ান বাতিল হওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন পাকিয়ং থেকে কলকাতার টিকিট কাটা যাত্রীরাও। উড়ান বাতিল শুনে তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার পাহাড়ি পথ বেয়ে নেমে আসছেন শিলিগুড়িতে। শুরু হচ্ছে বাগডোগরা থেকে কলকাতার উড়ানে জায়গা পাওয়ার লড়াই।