শবনম আলি। —ফাইল চিত্র।
প্রেমিককে বিয়ে করতে বাধা দেওয়ায় পরিবারের ৭ সদস্যকে খুন করেছিলেন এক রাতেই। ১৩ বছর আগে উত্তরপ্রদেশে থেকে আসা এই ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডে হইচই পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত শবনম আলি ফের খবরের শিরোনামে। তাঁর ফাঁসির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল মথুরার জেলে। এখনও পর্যন্ত শবনমের ফাঁসির দিন ক্ষণ যদিও এখনও ঠিক হয়নি। তবে এই রায় কার্যকর হলে তা হবে স্বাধীন ভারতে প্রথম কোনও মহিলার মৃত্যুদণ্ড।
৩৮ বছর বয়সি শবনম এই মুহূর্তে রামপুর জেলে বন্দি। ২৫ বছর বয়সে তিনি ওই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। জানা গিয়েছে, পাড়ার ছেলে সেলিমের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল শবনমের। সেলিমকে বিয়ে করবেন বলে জেদ ধরে বসেছিলেন তিনি। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত যার বিদ্যের দৌড়, সেই সেলিমের সঙ্গে ডবল এমএ পাশ মেয়ের বিয়ে দিতে চাননি শবনমের পরিবারের লোকজন। তাতেই সেলিমের সঙ্গে শলা পরামর্শ করে পরিবারের সদস্যদের শবনম খুন করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মা, বাবা, দুই দাদা, বৌদি, ১০ মাসের ভাইপো এবং এক আত্মীয়কে ঘুমের ওষুধ মেশানো দুধ খাইয়ে প্রথমে অজ্ঞান করে দেন। তার পর গলার নলি কেটে একে একে সকলকে খুন করেন। ২০১০ সালে সেই মামলায় শবনম এবং সেলিম, দু’জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় আমরোহার দায়রা আদালত। সাজা মকুবের জন্য তার পর থেকে গত ১১ বছরে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছেন শবনম।
নিম্ন আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা করে দেখতে সুপ্রিম কোর্টে আলাদা করে আবেদনও জানান তিনি। কিন্তু ২০২০-র জানুয়ারি মাসে তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। তবে বিচারবিভাগীয় কমিটির কাছে আবেদনটি ফের একবার পুনর্বিবেচনা করে দেখা এবং কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের করার উপায় এখনও শবনমের হাতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সব আইনি দরজা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত শবনমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাবে না। তবে শবনমের ফাঁসি কার্যকর করার দিন ক্ষণ এবং সময় ঠিক করতে আমরোহা দায়রা আদালতে ইতিমধ্যেই আবেদন জমা পড়ে গিয়েছে।
প্রায় ১৫০ বছর আগে তৈরি মথুরা জেলই দেশের মধ্যে একমাত্র জেল, যেখানে মহিলাদের ফাঁসি কার্যকর করার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাধীন ভারতে এখনও পর্যন্ত কোনও মহিলাকে ফাঁসি দেওয়া হয়নি। তাই সেখানকার ফাঁসিকাঠ অব্যবহৃতই রয়ে গিয়েছে।
তবে মথুরা জেলে পুরোদমে ফাঁসির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষকে শবনমকে ফাঁসিতে ঝোলানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে বলা হয়েছে ইতিমধ্যেই। সেই মতো কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মথুরা জেলে কর্মরত এক আধিকারিক। মথুরা জেলের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট শৈলেন্দ্র মৈত্রে বলেন, ‘‘ফাঁসিকাঠে কিছু সমস্যা ছিল। সেগুলো ঠিক করা হচ্ছে। বিহারের বক্সার জেল থেকে ফাঁসির দড়ি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ফাঁসুড়ে পবন জহ্লাদ এসে একবার সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে গিয়েছেন।’’ তবে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর পরোয়ানা তাঁদের হাতে এসে পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন শবনমের আইনজীবীরা।
চার প্রজন্ম ধরে ফাঁসুড়ের কাজ করে আসছেন পবন। তাঁর প্রপিতামহ লক্ষ্মণ রাম ফাঁসি দিয়েছিলেন ভগৎ সিংহকে। তাঁর দাদু কাল্লু ইন্দিরা গাঁধীর হত্যাকারী এবং রঙ্গা-বিল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। দীর্ঘ ৪৭ বছর সরকারি ফাঁসুড়ে হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন তাঁর বাবা মাম্মু। গত বছর নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসিতে ঝোলান পবন। একটি সংবাদমাধ্যমের তরফে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা। আমি তো নিমিত্ত মাত্র।’’ ২০ বছরের ছেলেকে এ বার সঙ্গে নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন পবন। তবে সরকার তাঁর টাকা বাড়াচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন পবন। তিনি বলেন, ‘‘আশাকরি এ বার অন্তত পারিশ্রমিক বাড়বে। মাসে মোটে সাড়ে ৭ হাজার টাকা পাই। ৭ ছেলেমেয়ের বাবা আমি।’’