গরমে ছটফট করছেন। ঘেমেনেয়ে ক্লান্ত? যদি বরফঘেরা একটা ক্যাফেতে গিয়ে আপনাকে এক কাপ কফি খেতে বলা হয়, যাবেন? বিদেশ নয়, এই সুযোগ পাচ্ছেন এ দেশেই। এরকম একটা ক্যাফেতে যেতে ইচ্ছে করছে নিশ্চয়ই?
সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান কাশ্মীরের লাদাখ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সেখানে পর্যটকের জন্য নতুন করে যোগ হয়েছে ‘আইস ক্যাফে’।
জলের সমস্যা দূর করতে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক পুরস্কারজয়ী সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুক ফ্যাং গ্রামে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির প্রজেক্টের কাজ শুরু করেন। তবে তার আগে তিনি আয়োজন করেন একটি প্রতিযোগিতার।
কৃত্রিম হিমবাহ প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন হয় সেই বছরের ২৩ মার্চ, আন্তর্জাতিক জলদিবসে। মোট পুরস্কারমূল্য ছিল ৫ লক্ষ টাকা।
স্থানীয় ১২টি গ্রাম এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। গেয়া মেরু গ্রামের তরফে ৭৫ ফুটের একটি স্তূপ বানানো হয়। ৪৫ লক্ষ লিটার জল দিয়ে বানানো হয়েছিল এই স্তূপ। প্রতিযোগিতায় যুগ্ম দ্বিতীয় হয়ে তারা দেড় লক্ষ টাকা পুরস্কার পায়।
এর পর প্রতিযোগীরা কর্মশালায় কাজ করা শুরু করেন বরফের স্তূপ নিয়ে। ২৫ হাজার টাকা পান তাঁরা ৭৫ মিমি পুরু ৩০০ মিটার পাইপ কেনার জন্য।
মাটি থেকে ৬০ ফুট উপর থেকে পাইপে করে জল ফেলা হত। এই জল লাদাখের তাপমাত্রায় সারা রাতে জমে কঠিন বরফ হয়ে স্তূপের সৃষ্টি করত।
ডোম শেপের স্টিল ফ্রেম-সহ একটি স্তম্ভ তৈরি করেন তাঁরা। জল পরিবহণ শুরু করে। নভেম্বরের শেষে গোটা স্টিলের কাঠামোটা বরফে ঢেকে যায়। ৭৮ ফুট মতো উঁচু হয় এই স্তূপ।
পাইপের ব্যাসার্ধ ৭৫ মিমি থেকে ৪০ মিমি করা হয়। পাইপে স্প্রিংক্লার যোগ করে জলবিন্দু বের করার ব্যবস্থা হয়। উচ্চতার তারতম্যের জন্য চাপ তৈরি হয় পাইপে। স্তূপ থেকে বেয়ে নামার সময় জল জমে যায়।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে জল জমাট বাঁধা শুরু করে, মার্চের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ অবধি তা চলে। নভেম্বরে জল ছাড়া হয় সূর্যাস্তের পর। বিকেল পাঁচটা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত। ডিসেম্বরেও সারা দিন জলের স্রোত থাকেই।
নভেম্বরের শেষে স্তূপের উচ্চতা দাঁড়ায় ৪০-৫০ ফুট। ডিসেম্বরে পাইপ জমাট বাঁধতে থাকে, ১৫ দিন জল ছাড়া যায় না।
বরফের করিডরকে ক্যাফে হিসাবে ব্যবহার করা শুরু হয় চলতি বছর। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ক্যাফে শুরু হয়। তবে এপ্রিল থেকে বরফ গলতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু কৃষিকাজে সুবিধা হয়েছে এতে। আশপাশের গ্রামেও সেচের কাজে সুবিধা হচ্ছে এতে। অন্য গ্রামেও এরকম ক্যাফে খোলার কথা ভাবা হচ্ছে।
বৌদ্ধদের উপাসনালয়ের আদলে তৈরি এই ক্যাফে যে কারও নজর কাড়বে। লাদাখে পাহাড়ের উঁচুতে তৈরি এই ক্যাফেতে পাবেন গরম নুডলস, স্যুপ ও চা-সহ নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ হাজার ফুট উপরে লে জাতীয় সড়কের থেকে ৭৫ কিমি দূরে গেয়া মেরু গ্রামে এটি অবস্থিত।