পহেলগাঁওয়ে সেনা-পুলিশের টহলদারি। —ফাইল চিত্র।
আচমকাই মুহুর্মুহু গুলি। সেই শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। স্থানীয় এবং পর্যটকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি ছো়টাছুটি পড়ে যায়। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রক্ত। মাত্র কয়েক মিনিটের তাণ্ডবের নেপথ্যে ছিল মাত্র চার থেকে ছ’জন জঙ্গি! স্থানীয় সূত্রে খবর, জঙ্গিদের পরনে ছিল পুলিশের পোশাক। কেউ কেউ আবার সেনার পোশাক পরেও এসেছিল। সকলের হাতে ছিল একে-৪৭।
মঙ্গলবার দুপুরে কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পর্যটনকেন্দ্র পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই পর্যটক। হামলার ঘটনায় কেউ স্বামী হারিয়েছেন, কেউ আবার পুত্র! পরিজনদের হারিয়ে শোকে পাথর অনেকেই। যাঁরা প্রাণ বাঁচিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ফিরতে পেরেছেন তাঁদের চোখেমুখেও আতঙ্কের ছাপ। আহতদের মধ্যে অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। সকলের একটাই প্রশ্ন, কী ভাবে এত বড় হামলার ঘটনা ঘটল?
মঙ্গলবার জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। তখন সবে সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র অবলুপ্তি হয়েছে। ঠিক সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেই পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। সেই সংগঠনেরই পাঁচ-ছ’জন আচমকাই মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ে হামলা চালায়।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে আইডি বিস্ফোরণের ছক করেছিল জঙ্গিরা। তবে পরে পরিকল্পনা বদলে দু’টি দলে ভাগ হয়ে যায় জঙ্গিরা। তার পর একে ৪৭ নিয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালায় তারা। জঙ্গিরা সকলেই সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিল বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। দিন কয়েক আগেই ভারতে আসে তারা। এমনকি এলাকা পরিদর্শনও করে যায়।
গোয়েন্দাদের অনুমান, খুবই সাবধানতার সঙ্গে হামলার ছক কষেছিল জঙ্গিরা। ভারতে আসার পরই গোপন আস্তানায় গা- ঢাকা দিয়ে ছিল। সুযোগের অপেক্ষা করছিল তারা। লশকরের অন্যতম মাথা তথা ‘ওয়ান্টেড’ জঙ্গি হাফিজ সৈয়দের ঘনিষ্ঠ সইফুল্লা কাসুরিরই পহেলগাঁও হামলার ছক কষেছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর।
হামলার ঘটনার পরই পহেলগাঁও উপত্যকায় নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু পহেলগাঁও নয়, জম্মু-কাশ্মীরের অন্যান্য জায়গাও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার রাতেই কাশ্মীর পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শ্রীনগরে পৌঁছে সেনা, আধাসেনা, পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় উদ্বিগ্ন। সৌদি আরব সফরসূচি কাঁটছাঁট করে বুধবার সকালেই দিল্লি ফিরে আসেন তিনি। বিমানবন্দরেরই তিনি আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকও করেন। খোঁজখবর নেন পহেলগাঁও পরিস্থিতির। বুধবারই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করার কথা তাঁর। তবে এখনও পর্যন্ত হামলাকারীদের নাগাল পাওয়া যায়নি। তাদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় চিরুনিতল্লাশি শুরু করেছে নিরাপত্তাবাহিনী।