অস্ত্রে শান দেওয়া হয়েছে। সেই সব অস্ত্র নিয়ে তাঁরা জঙ্গলে বেরোবেনও। কিন্তু শিকার করবেন না। বরং কাউকে শিকার করতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা আটকাবেন। এ বার এই ভাবেই প্রতীকী শিকার উৎসব পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলমা জঙ্গলের কয়েকটি গ্রামের আদিবাসীরা।
আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে দলমায় শুরু হচ্ছে শিকার উৎসব। দলমার জঙ্গলের হরিণ থেকে শুরু করে নানা বন্য জন্তু শিকার করেন তারা। দলমার কাছে গদড়া পঞ্চায়েতের পরসুডিহি গ্রামের আদিবাসীরা জানালেন, তাঁরা এ বার অস্ত্র নিয়ে জঙ্গলে বেরোবেন ঠিকই। কিন্তু জঙ্গলে বন্য জন্তু কমে যাওয়ায় আত্মরক্ষার প্রয়োজন ছাড়া জঙ্গলে শিকার তাঁরা করবেন না। পরসুডিহি গ্রামের বাসিন্দাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের বন দফতরের চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন এল আর সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দলমার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে এই বিষয়ে সজাগ করার চেষ্টা করছি। গ্রামের মুখিয়াদের নিয়ে মিটিং করেছি। এ বার উৎসবকে প্রতীকী চেহারা দিতে রাজিও হয়েছেন অনেকে।’’ এল আর সিংহ জানান, সম্প্রতি মেদিনীপুরের চাঁদড়া রেঞ্জে বাঘ হত্যার কথা দলমা অনেক মানুষ শুনেছেন। অনেকেই মনে করছেন, শিকার উৎসবেরই বলি এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। গ্রামের আদিবাসীদের বোঝাচ্ছি, কী দরকার উৎসবের নামে জঙ্গলের প্রাণীদের মেরে ফেলার?
ঝাড়খণ্ডের বন দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, অনেক সময় দেখা যায় শিকার উৎসবে ভিন রাজ্যের আদিবাসীরাও দলমায় এসে শিকার করেন। এই ব্যপারেও গ্রামের মানুষদের সজাগ করছেন তাঁরা। দলমার একটি গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল মুন্ডা বলেন, ‘‘আগে জঙ্গলের বন্য জন্তুর হাত থেকে বাঁচতে শিকার করা দরকার ছিল। এখন জঙ্গলে বন্য প্রাণী কমে গিয়েছে। এখন বেশির ভাগ সময়েই শিকার হয় পিকনিকের জন্য।’’ মঙ্গলবাবু জানালেন, বাইরে থেকে কেউ শিকার করতে এলে তাঁরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
দলমার কাছে হলুদবনি গ্রামের বাসিন্দা পূর্ণেন্দু মাহাতো দু’টি হরিণ পুষতেন। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘ওই হরিণ দু’টিকে বছর কয়েক আগে কোনও এক শিকারি এই শিকার উৎসবে মেরে ফেলে। এর পর থেকে আমিও শিকার উৎসব বন্ধ করতে বিভিন্ন গ্রামে প্রচার চালাচ্ছি। তবে এখনও দলমার অনেক গ্রামে শিকার উৎসব চালু রয়েছে।’’
বংশপরম্পরায় চলে আসা এই উৎসবকে সহজে বন্ধ করা যাবে না জেনে সম্প্রতি দলমার বন দফতরের কর্মীরা বিকল্প হিসেবে অন্য ধরনের উৎসবের আয়োজন করছেন। এল আর সিংহ বলেন, ‘‘আদিবাসী গ্রামগুলোতে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করছি। ওই সব টুর্নামেন্টে জয়ী দলকে মুরগি, খাসি পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয়। বন্য জন্তু জঙ্গলে শিকার না করেও এরা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন মুরগি, খাসির মাংস। এই উদ্যোগে ভালই সারা মিলছে।’’