পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল। ছবি সংগৃহীত।
পাঁচ বছর পরে ফের ‘অ্যাওয়ার্ড ওয়াপসি’-র তিরে বিদ্ধ মোদী সরকার।
কৃষি আইন নিয়ে ‘চাষিদের সঙ্গে মোদী সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা’-র প্রতিবাদে আজ পদ্মবিভূষণ সম্মান ফিরিয়ে দিলেন পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল। এনডিএ-র সবথেকে পুরনো শরিক, শিরোমণি অকালি দলের ৯২ বছর বয়সি নেতা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারী কৃষকদের যে ভাবে সাম্প্রদায়িক কটাক্ষ করা হচ্ছে, তাতে তিনি গভীর ভাবে আহত। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে চিঠি দিয়ে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে পঞ্জাবের পাঁচ বারের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমি সত্যিই আশ্চর্য হচ্ছি, সরকার কেন এত হৃদয়হীন, অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ল।’’
পঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দলের বিক্ষুব্ধ নেতা সুখদেব সিংহ ধিঁড়সাও পদ্মভূষণ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাঁকে গত বছরই মোদী সরকার পদ্মভূষণ দিয়েছিল। জাতীয় হকি দলের প্রাক্তন অধিনায়ক পরগত সিংহ-সহ পঞ্জাবের অন্তত ৩০ জন প্রাক্তন খেলোয়াড় পদ্মশ্রী ও অন্যান্য সরকারি পদক ফেরানোর কথা ঘোষণা করেছেন।
২০১৫-য় যুক্তিবাদী এম এম কালবুর্গি, গোবিন্দ পানসারে, নরেন্দ্র দাভোলকরের হত্যা, দাদরির গণপিটুনির পরে দেশের বিশিষ্টজনেরা সাহিত্য অকাদেমি ও অন্যান্য সরকারি পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়া শুরু করেছিলেন। মোদী জমানায় অসহিষ্ণুতা, বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে অন্তত ৪০ জন সাহিত্যিক সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দেন। কিন্তু পদ্ম সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে বিরল।
আরও পড়ুন: কৃষি আইন সংশোধনের ইঙ্গিত কেন্দ্রের, কৃষকেরা চান প্রত্যাহার
সরকারি সূত্রের খবর, পঞ্জাবে চাষিদের আন্দোলনে রাশ টানতে কেন্দ্র সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহকেও বার্তা পাঠিয়েছে। বিজেপির বিরুদ্ধে চাষিদের আন্দোলনে কংগ্রেসের রাজনৈতিক সুবিধা হলেও, পাকিস্তান-সীমান্তবর্তী রাজ্যে অশান্তি নিয়ে ক্যাপ্টেনও চিন্তিত। আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করে ক্যাপ্টেন তাঁর উদ্বেগের কথা জানান। বৈঠকের পরে ক্যাপ্টেন বলেন, ‘‘কেন্দ্রের সঙ্গে চাষিদের আলোচনা চলছে। আমার এখানে সমাধান করার কিছু নেই। আমি নিজের বিরোধিতার কথা জানিয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমাধানের অনুরোধ করেছি। কারণ, এতে আমার রাজ্যের অর্থনীতি এবং দেশের নিরাপত্তায় প্রভাব পড়ছে।’’
কৃষি আইনের প্রতিবাদে পঞ্জাবে চাষিদের আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে শিরোমণি অকালি দল কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে এনডিএ ছাড়ে। প্রকাশের পুত্রবধূ হরসিমরত কউর মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন। আজ প্রকাশ চিঠিতে লিখেছেন, সরকার অধ্যাদেশ আনার পরে আপত্তি ওঠায় তা দূর করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার কথা রাখেনি। শিরোমণি অকালি দল (ডেমোক্র্যাটিক) দলের নেতা, বিক্ষুব্ধ অকালি ধিঁড়সার সঙ্গে বিজেপির সদ্ভাব তৈরির চেষ্টা দেখেও বাদলরা অখুশি ছিলেন। সেই ধিঁড়সাও এ দিন পদ্মভূষণ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, এর পরে হরিয়ানায় বিজেপি সরকারের শরিক দুষ্যন্ত চৌটালার জেজেপি-র উপরে চাপ আরও বাড়ল।
আরও পড়ুন: টিকায়েতের সঙ্গে আলাদা আলোচনা
কৃষি আইনের প্রতিবাদে ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিয়ে পঞ্জাব-হরিয়ানা-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের চাষিরাই দিল্লি ঘেরাও শুরু করেন। পঞ্জাবের ক্রীড়াবিদরাও আগামী ৫ ডিসেম্বর আন্দোলনরত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে ‘দিল্লি চলো’-র ডাক দিয়েছেন। সাক্ষাতের সময় চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠিও দিয়েছেন তাঁরা। অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাক্তন বাস্কেটবল খেলোয়াড় সজ্জন সিংহ চিমা বলেন, ‘‘কয়েক মাস ধরে কৃষকেরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁদের আন্দোলন দমন করতে জল-কামান, কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ যে সব ক্রীড়াবিদ পদক ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিক গেমসে সোনাজয়ী ভারতীয় হকি দলের সদস্য সুরেন্দ্র সিংহ সোধির মতো বহু খ্যাতনামা।