শনিবার ভিডিয়োবার্তায় ভোলে বাবা। ছবি: এক্স।
ভোলে বাবার উপর আর তাঁদের আস্থা নেই। জানিয়ে দিলেন হাথরসকাণ্ডে মৃতদের পরিবারের সদস্যেরা। স্বঘোষিত ধর্মগুরু সুরজপাল সিংহের গ্রেফতারির দাবিও জানালেন তাঁরা। ঘটনার পর থেকে কেন তিনি লুকিয়ে আছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন খোদ ভক্তেরাই। বাবাকে প্রকাশ্যে আনার দাবি জানানো হয়েছে। শনিবার সকালে বাবার ভিডিয়োবার্তা দেখে যেন ক্ষোভ আরও বেড়ে গিয়েছে।
গত ২ জুলাই উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ‘সৎসঙ্গের’ আয়োজন করেছিলেন সুরজপাল। প্রতি বছরই এমন ধর্মীয় জমায়েতের আয়োজন করে থাকেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে খবর, লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয়েছিল ওই ‘সৎসঙ্গে’। বাবার পায়ের ধুলো নিতে গিয়ে আচমকা হুড়োহুড়ি শুরু হয়। পদপিষ্ট হয়ে সেখানে এখনও পর্যন্ত ১২১ জনের মৃত্যুর খবর জানা গিয়েছে। ঘটনার দিন থেকেই আয়োজক সুরজপাল ওরফে বাবা পলাতক। চার দিন পর অবশেষে তিনি ‘প্রকাশ্যে’ আসেন। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে একটি ভিডিয়োবার্তা দেন।
ভিডিয়োয় বাবাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ২ তারিখের ঘটনায় তিনি গভীর ভাবে ব্যথিত। পাশাপাশি প্রশাসনের উপর আস্থা রাখতেও অনুরোধ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, যাঁরা প্রকৃত দোষী, তাঁরা শাস্তি পাবেনই। হাথরসে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের পরিবার এবং যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের পাশে থাকতে কমিটির সদস্যদের অনুরোধও করেছেন বাবা। ভিডিয়োয় সকলের মঙ্গলকামনা করেছেন তিনি।
হাথরসের ঘটনা এবং তার পরেই বাবার গা-ঢাকা দেওয়া ভক্তেরা মোটেই ভাল চোখে দেখেননি। সেই থেকেই ক্ষোভ জমছিল তাঁদের মনে। শনিবার ভিডিয়োয় বাবাকে বার্তা দিতে দেখে ক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার পরিবর্তে আরও বেড়ে গিয়েছে বলেই মত অনেকের। হাথরসকাণ্ডে মৃত এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ওই ভিডিয়ো দেখার পর বলেন, ‘‘বাবা চার দিন ধরে লুকিয়ে ছিলেন কেন? ওঁর প্রকাশ্যে আসা উচিত ছিল আগেই। উনি তো সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রক! ওঁর গা-ঢাকা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কী? আসলে উনি মৈনপুরীতে নিজের বিলাসবহুল বাংলোয় আরাম করছেন। আমরা আর কোনও দিন বাবার ‘সৎসঙ্গে’ যাব না।’’
ভিডিয়ো দেখার পর আরও এক ভুক্তভোগীর বক্তব্য, ‘‘বাবা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কী করে? ওঁকে তো অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত। উনি দোষী। আমরা আর ওঁকে বিশ্বাস করি না। সব ‘সৎসঙ্গ’ বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ওখানে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়, আর কিছুই নয়।’’
হাথরসের আর এক বাসিন্দা বলেছেন, ‘‘মানুষ মা, বোন, সন্তানকে হারিয়েছেন। ঘরে ঘরে এখন শুধু কান্না। এর জন্য দায়ী একমাত্র বাবা। ওঁকে গ্রেফতার করতেই হবে।’’
হাথরসের ঘটনার তদন্ত শুরু হওয়ার পরেও কেন এফআইআরে বাবার নাম রাখা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ভুক্তভোগীদের একাংশ। এ প্রসঙ্গে এক ভক্ত বলেন, ‘‘বাবা যদি দোষী না হতেন, তবে গা-ঢাকা দিতেন না এ ভাবে। ঘটনার দিনই ওঁর ঘটনাস্থলে আসা উচিত ছিল। সংবাদমাধ্যমে কিছু বলা উচিত ছিল। বাবা আমাদের সকলের শত্রু।’’
হাথরসকাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বঘোষিত ধর্মগুরু সুরজপাল আগে কাসগঞ্জে থাকতেন। ছিলেন কনস্টেবল। মূলত স্বল্প আয়যুক্ত দলিত পরিবার, যাঁরা মূলত দিনমজুর, শ্রমিক, সাফাইকর্মী, ছুতোরের কাজ করতেন, তাঁরাই হয়ে ওঠেন ভোলে বাবার ভক্ত। ঊর্মিলা নামে ‘বাবা’র এক ভক্ত সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘বাবা’ কারও কাছে টাকাপয়সা চাইতেন না। ‘সৎসঙ্গে’ আসা ভক্তদের কাছে তাঁর একটাই বার্তা ছিল, ‘মাছ, মাংস, ডিম, মদ খাবেন না।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক ভক্ত জানিয়েছেন, ‘সৎসঙ্গ’ চলাকালীন ভোলে বাবা বলেছিলেন, “আজ প্রলয় আসবে। তার পরই এই ঘটনা ঘটে।” ঘটনার পর থেকে ভোলে বাবার সন্ধান মিলছিল না। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার এই ঘটনার অন্যতম মূল অভিযুক্ত দেবপ্রকাশ মধুকর আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এমনকি, পটনার মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বাবার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাও রুজু হয়েছে শনিবারই।