অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিংহ— ফাইল চিত্র।
শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে তেলঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিংহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। হিংসায় উস্কানি বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের অভিযোগে বৃহস্পতিবার তাঁরা রাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। ফেসবুকের মুখপাত্র আজ তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘ঘৃণা এবং হিংসায় উস্কানিমূলক পোস্ট আমাদের নীতির পরিপন্থী। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পোস্টগুলি মূল্যায়ন করে দেখেছি, সেগুলি আমাদের নীতি লঙ্ঘন করছে। তাই আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে তাঁর অ্যাকাউন্ট সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান শশী তারুরের তলব পেয়ে বুধবার ফেসবুকের ভারতীয় কর্তা অজিত মোহন বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন। যদিও ফেসবুক কর্ণধার মার্ক জ়াকারবার্গকে কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের পাঠানো একটি চিঠি ঘিরে গোড়াতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বৈঠক। রবিশঙ্করের চিঠির প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি সদস্যেরা অভিযোগ তোলেন কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে ফেসবুক। এমনকি, ফেসবুকের নীতি এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিক নিয়োগ পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
যদিও গত মাসে মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত খবরে ফেসবুকের বিরুদ্ধে সরাসরি বিজেপির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়, ভারতের শাসক দল বিজেপিকে চটাতে ভয় পান ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। কারণ, তাতে ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল। আর তাই বিজেপি নেতাদের হিংসায় উস্কানি বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেন না ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এমনকি, এ বিষয়ে ঘোষিত নীতি ভাঙতেও পিছপা হয় না জ়াকারবার্গের সংস্থা। প্রকাশিত প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসায় প্ররোচনা দিতে ফেসবুকে একাধিকবার বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন তেলঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিংহ।
আরও পড়ুন: জ়াকারবার্ককে চিঠি ডেরেকের, পক্ষপাত নিয়ে দু’পক্ষের প্রশ্নে বিদ্ধ ফেসবুক
‘বিপজ্জনক ব্যক্তি এবং সংস্থা’ নীতির ভিত্তিতে রাজাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন ফেসবুক কর্মীরা। কিন্তু সংস্থার ভারতীয় শাখার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর আঁখি দাসের হস্তক্ষেপেই ওই বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছিল কপিল মিশ্র, অনন্ত হেগড়ে-সহ একাধিক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধেও। কিন্তু সংস্থার কর্মীদের আঁখি স্পষ্ট বলে দেন, বিজেপি নেতাদের আইনভঙ্গকারী হিসেবে শাস্তি দিলে ভারতে ফেসবুকের ব্যবসায়িক ক্ষতি হতে পারে। আঁখির বোন রশ্মি দাস দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপির সভানেত্রী ছিলেন। সেই তথ্য সামনে আসায় পুরো বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছিল।
আরও পড়ুন: সংসদীয় কমিটিতে অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন ফেসবুকের ভারতীয় প্রধান
এই পরিস্থিতিতে আজ হায়দরাবাদের ঘোসামহলের প্রভাবশালী বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ফেসবুকের পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও গত মাসে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরেই টি রাজা সিংহ দাবি করেছিলেন, তাঁর কোনও অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই!