বিয়ে মিটতেই বুথে হাজির নবদম্পতি। কোয়ম্বত্তূরে সোমবার। ছবি: পিটিআই।
জনতার আবেগ এবং দাবিকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে রীতিমতো সরকারি উদ্যোগে রাজ্যজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়েছে মদের দোকান! বন্যাত্রাণের টাকা নিয়ে সরকারের নিচু তলায় নয়ছয়! এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অনুন্নয়ন এবং দুর্নীতি প্রশ্নে শহুরে মধ্যবিত্তের ক্ষোভ।
তামিলনাড়ুর ভোট বাজারে এই সবক’টির সমবেত ধাক্কায় দীর্ঘদিন পরে টানা দু’বার জেতার সুযোগ পেয়েও হারাতে পারেন জয়ললিতা। অন্তত ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় তেমন ইঙ্গিতই মিলেছে। সোমবার সেখানে ভোটপর্ব মিটেছে। তার পরেই বিভিন্ন সংস্থার করা সমীক্ষার নির্যাস, লড়াইটা অনেক ক্ষেত্রে ‘কাঁটে কা টক্কর’ হলেও এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতার মুখের হাসি কেড়ে বাজিমাত করতে পারেন ডিএমকে-প্রধান করুণানিধি। এই ধরনের ভোট পরবর্তী সমীক্ষা যে সব সময় ঠিক প্রমাণিত হয়েছে, তা নয়। কিন্তু এর মাধ্যমে জনমতের একটা আঁচ অনেক ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। আর তাতেই ইঙ্গিত, তামিলনাড়ুর দীর্ঘদিনের রীতি মেনে এ বারও ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছে জনগণ। অবশ্য সমীক্ষার ফলাফলে এটাও বলা হয়েছে, েক্ষমতায় এলেও কলাইনারের ঘাড়ের উপরেই নিঃশ্বাস ফেলবেন আম্মা।
তামিলনাড়ু ভোটে এই প্রথম ডিএমডিকে, পিএমকে, ভিসিকে-সহ বিভিন্ন ছোট তামিল দল বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে আলাদা ফ্রন্ট গড়ে লড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত দু’দশক ধরে এই ছোট দলগুলি যখন যে বড় দলের (ডিএমকে অথবা এডিএমকে) সঙ্গে থেকেছে, ভোটের ফলে তারাই শেষ হাসি হেসেছে। কিন্তু এ বারে ছবি অন্য! প্রচার-পর্বে তামিলনাড়ুতে গিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে দোকানদার, শিক্ষক, ওলা-উবেরের চালক— যার সঙ্গেই কথা হয়েছে, একটা কথা শোনা গিয়েছে। তা হল, এই ভোট সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে অদ্ভুতুড়ে ভোট! কে জিতবে, তা আগাম অনুমান করাও অসম্ভব। এবং তার সবচেয়ে বড় কারণ হল, বামেদের সঙ্গে নিয়ে ডিএমডিকে নেতা বিজয়কান্তের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’। গত বিধানসভা ভোটে বিজয়কান্ত ছিলেন এডিএমকে-র সঙ্গে। কিন্তু পরে দু’পক্ষে তিক্ততা তৈরি হয়, যখন বিজয়কান্তের দলের একের পর এক বিধায়ককে নিজের দলে টেনে নিয়েছেন আম্মা। এ বারে এই তৃতীয় ফ্রন্ট লড়েছে মূলত ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া ক্ষোভকে সম্বল করেই। পর্যবেক্ষকদের মতে, এতে আখেরে লাভ হওয়ার কথা জয়ারই। কেন না, তাঁর বিরোধী-ভোট ভাগ হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। আর তাতে ব্যবধান কমলেও শেষ হাসি হাসার সুযোগ পাবেন আম্মাই।
কিন্তু ভোট পরবর্তী সমীক্ষার ইঙ্গিত অন্য। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে বিভিন্ন প্রশ্নে এডিএমকে-র উপরে যে বিপুল ক্ষোভ জমা হয়েছে, তা বোঝা গিয়েছিল প্রচার পর্বেই। তার উপর পশ্চিমবঙ্গের মতোই নির্বাচন কমিশন এখানেও কড়া হয়েছে। আর এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় ক্ষমতাসীন দলকে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রাজ্য জুড়ে যত বেআইনি টাকা উদ্ধার করেছে কমিশনের ‘ফ্লাইং দল’, তার ৭৫ শতাংশ এডিএমকে নেতাদের বলেই জানা গিয়েছে। জনমানসে তার একটা প্রভাব পড়েছে। তা ছাড়া, গত বছর ডিসেম্বরে চেন্নাই এবং লাগোয়া এলাকার ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলায় জয়ার সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রবল অসন্তোষ রয়েছে অসংখ্য মানুষের। সে সময় ক্ষোভ সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রী ভুক্তভোগী পরিবারগুলিকে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও বহু লোকই সেই টাকা পাননি বলে অভিযোগ। ভোটপর্বে তার ছাপও পড়েছে। তা ছাড়া চেন্নাই শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে ওই টাকা খুব বেশি কিছু না। বরং তাঁরা চূড়ান্ত নাজেহাল হওয়ার স্মৃতিকেই লালন করেছেন।
সব মিলিয়ে তাই, সামান্য হলেও ‘অ্যাডভান্টেজ’ ডিএমকে। তার ইঙ্গিতও ছিল। ইন্ডিয়া টুডের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ২৩৪ আসনের তামিলনাড়ুতে করুণানিধির দল পেতে পারে ১২৪ থেকে ১৪০টি আসন। সে ক্ষেত্রে জয়ললিতার দল পাচ্ছে ৮৯ থেকে ১০১টি আসন। নিউজ নেশন-এর হিসেবেও এগিয়ে করুণানিধি। তাদের দাবি, ডিএমকে পেতে পারে ১১৪ থেকে ১১৮টি, এডিএমকে ৯৫ থেকে ৯৯টি আসন। সি-ভোটারের সমীক্ষা আবার উল্টো! তারা বলছে ডিএমকে পেতে পারে ৭৮টি আসন, এডিএমকে ১৩৯।
সমীক্ষার হিসেব যা-ই বলুক, দুই বড় দলের মধ্যে তফাৎ খুব বিরাট নয়। প্রকৃত ফলে শেষ পর্যন্ত কী হয়, ১৯ মে সেটাই দেখার।