নাজ়ির আহমেদ ওয়ানি
জঙ্গি ছিলেন। পরে আত্মসমর্পণ করে হয়েছিলেন ‘ইকওয়ান’। তখন অস্ত্র হাতে নিরাপত্তাবাহিনীর হয়ে লড়তেন সেই জঙ্গিদের সঙ্গেই। এর পরে এক দিন যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। জঙ্গিদের সঙ্গে পর পর ১৭টা বড় এনকাউন্টার। আর তাতেই প্রাণ হারান নাজ়ির আহমেদ ওয়ানি। দক্ষিণ কাশ্মীরে জঙ্গি অধ্যুষিত কুলগামের আসমুঝি গ্রাম থেকে আসা সেনার সেই ল্যান্স নায়েক নাজ়িরকেই এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশে সাহসিকতার সবচেয়ে বড় পুরস্কার মরণোত্তর ‘অশোক চক্র’ দেওয়া হচ্ছে। আর তিনিই হচ্ছেন প্রথম কাশ্মীরি, যিনি এই পুরস্কার পাচ্ছেন।
গত বছরের ২৫ নভেম্বরের ঘটনা। সেনার কাছে খবর এসেছিল, কাশ্মীরের সোপিয়ানের হীরাপুর গ্রামে একটি বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছে লস্কর-ই তইবার ছয় জঙ্গি। সেনার অন্য জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে সেই বাড়িতে অভিযান চালান নাজ়ির। গুলির লড়াই শুরু হয়ে যায়। মুখোমুখি সেই লড়াইয়ে লস্করের জেলা কম্যান্ডার আর এক বিদেশি জঙ্গিকে প্রাণ দিতে হয় নাজ়িরের ছোড়া বুলেটে। পাল্টা জবাব দিয়ে যাচ্ছিল জঙ্গিরাও। মাথায় আর দেহের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিদের ছোড়া বুলেটে গুরুতর আহত নাজ়ির ওই অবস্থাতেই তৃতীয় জঙ্গিকে বুলেটবিদ্ধ করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সেনা হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় ৩৮ বছর বয়সি নাজ়িরের। এর পরে সেনা জওয়ানের মরদেহ পাঠানো হয় আসমুরি গ্রামে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন বহু মানুষ।
প্রজাতন্ত্র দিবসে ল্যান্স নায়েক নাজ়িরের স্ত্রী মাহাজাবেনের হাতে সাহসিকতার স্বীকৃতি ‘অশোক চক্র’ পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এর আগেও অবশ্য জঙ্গিদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন এই সেনা জওয়ান। ২০০৪ সালে সেনায় যোগ দিয়েছিলেন। তার পরে ২০০৭ ও ২০১৮ সালে সেনা পুরস্কার পেয়েছিলেন নাজ়ির। দ্বিতীয়বার সেনা পুরস্কার মিলেছিল মুখোমুখি লড়াইয়ে খুব কম দূরত্ব থেকে এক জঙ্গিকে মারার জন্য।
তাঁর মৃত ছেলের নাম ‘অশোক চক্র’ পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে শুনে নাজ়িরের বাবা হাবিবুল্লা বলেন, ‘‘এটা আমাদের জন্য গর্বের মুহূর্ত। নাজ়ির দেশের জন্য লড়েছিল। আমি ওঁর জন্য গর্বিত। ওঁকে দেখে অনেকেই সেনায় যোগ দেবে।’’ শেষযাত্রায় নাজ়ির নায়কের মর্যাদা পেয়েছিল, সে কথা তুলে হাবিবুল্লা জানান, তাঁদের বৃহত্তর পরিবারের সাত জন রয়েছেন সেনায়। প্রাণের ভয় তাঁরাও করেন না।