অসাংবিধানিক! মানছেনই না শাহ

‘অসাংবিধানিক’ ও ‘সংবিধান বিরোধী’ যুক্তি দিয়েই কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম, টিআরএস, এসপি, বিএসপি আজ লোকসভায় এই বিল পেশেরই বিরোধিতা করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৫
Share:

অমিত শাহ।—ছবি পিটিআই।

সুপ্রিম কোর্টেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আটকাবে না বলে বুক ঠুকে দাবি করলেন অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘কোনও ভাবেই এই বিল সংবিধানের কোনও অনুচ্ছেদকে আঘাত করে না।’’

Advertisement

‘অসাংবিধানিক’ ও ‘সংবিধান বিরোধী’ যুক্তি দিয়েই কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম, টিআরএস, এসপি, বিএসপি আজ লোকসভায় এই বিল পেশেরই বিরোধিতা করে। প্রধান অভিযোগ, এই বিলে ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করা হচ্ছে। যা সংবিধানের মূল সুর, সমানাধিকারের বিরুদ্ধে। কারণ, মোদী সরকার বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টান, পার্সিদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে। কিন্তু বাদ দেওয়া হচ্ছে মুসলিমদের।

অমিত অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘যুক্তিসঙ্গত শ্রেণি বিভাজনের ভিত্তিতে আইন তৈরিতে সংবিধানে বাধা নেই।’’ অর্থাৎ, তিনি বিভাজন করছেন ঠিকই। কিন্তু তার পিছনে যুক্তিও রয়েছে। কী সেই যুক্তি? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তানে রাষ্ট্র ধর্ম মুসলিম। সেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্যরা ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু মুসলিমদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম খাটে না। বিরোধীদের প্রশ্নের জবাবে অমিতের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আপনারা কি বলতে চান, পাকিস্তানে বা বাংলাদেশে মুসলিমদের উপরে অত্যাচার হবে? ’’ তবে তাঁর দাবি, এই বিলের সুবাদে না হলেও কোনও মুসলমানের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে বাধা নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: মধ্যরাতে লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ করালেন অমিত শাহ

আজ লোকসভায় বিল পেশ করার প্রশ্নেই ভোটাভুটি হয়েছে। উপস্থিত ৩৭৫ জনের মধ্যে ২৯৩ জনই সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাতে বিরোধীদের প্রশ্ন বন্ধ হয়নি। এই বিল কেন সংবিধান-বিরোধী, তা বোঝাতে তাঁদের প্রধান অস্ত্র সংবিধানের ১৪-তম অনুচ্ছেদ। যাতে বলা হয়েছে, আইনের চোখে সবাই সমান। কেশবানন্দ ভারতী, এস আর বোম্মাই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ধর্মীয় নিরপেক্ষতায় গুরুত্বকেও তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া, তাঁদের যুক্তি, বিলটি সংবিধানে নাগরিকত্ব বিষয়ক ৫ ও ১০ অনুচ্ছেদের বিরোধী। সংবিধানে বলা রয়েছে, রাষ্ট্র ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করতে পারে না। ২৫ ও ২৬ অনুচ্ছেদে স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অমিতের যুক্তি, সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ নাগরিকত্ব আইন তৈরি করতে পারে। সেখানে ১৪-তম অনুচ্ছেদের সমানাধিকার কোনও বাধা নয়।

আরও পড়ুন: রেশন কার্ড থাকুক বা না থাকুক, নাগরিকত্ব পেতে সমস্যা নেই, বাংলাকে বার্তা শাহের

যদিও কংগ্রেস ইঙ্গিত দিয়েছে, সংসদে পাশ হলেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আরও মামলা হবে। কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, কংগ্রেসের কেউ না কেউ আদালতে যাওয়ার জন্য উসখুস করছেন।’’ মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘‘এই বিল সংবিধানের ৫ থেকে ১১ ও ১৪, ১৫ অনুচ্ছেদের বিরোধী। সং‌বিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারেরও বিরোধী। ১৪-তম অনুচ্ছেদে রয়েছে, ভারতের ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে রাষ্ট্র আইনের সামনে কোনও ব্যক্তিকে সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। ‘কোনও ব্যক্তি’র অর্থ সেই ব্যক্তি নাগরিক হতেও পারেন, না-ও পারেন। তাই এই বিল শীর্ষ আদালতে অসাংবিধানিক বলে খারিজ হয়ে যাওয়ার সব রকম কারণ রয়েছে।’’

লোকসভায় আজ প্রশ্ন উঠেছে, কেন শ্রীলঙ্কা বা মায়ানমার থেকে আসা শরণার্থীরা এই বিলের সুবিধা পাবেন না? অমিতের বক্তব্য, এই বিভাজন আগেও হয়েছে। ১৯৭১-এ ইন্দিরা গাঁধী বাংলাদেশ থেকে আসা সকলকে নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পাকিস্তান থেকে আসা মানুষদের নেওয়া হয়নি কেন? কংগ্রেসের আমলেই উগান্ডা থেকে আসা লোকেদেরও নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল। যদিও বিরোধীদের একাংশ মনে করিয়েছে, ইন্দিরা কিন্তু ধর্মভিত্তিক বিভাজন করেননি, যা এ ক্ষেত্রে হচ্ছে। অমিত অবশ্য বলেন, ‘‘পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল, দু’দিকেই সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া হবে। এ দেশে তা পালন করা হলেও, বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তানে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement