Engineer

পদার্থবিদ্যা ও অঙ্ক না-পড়েই ইঞ্জিনিয়ারিং! বিতর্ক শিক্ষা শিবিরে

দ্বাদশ শ্রেণির পরে বিই, বি-টেক কোর্সগুলিতে ভর্তির জন্য এত দিন গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন আবশ্যিক ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২১ ০৫:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি শিক্ষা যে-সব মৌলিক বিষয়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছে, গণিত ও পদার্থবিদ্যা তার অন্যতম দুই প্রধান স্তম্ভ বলে শিক্ষা-বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অথচ অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশনের (এআইসিটিই) নতুন সিদ্ধান্তে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে গণিত ও পদার্থবিদ্যার পাঠ নেওয়া আর বাধ্যতামূলক থাকছে না! এই সিদ্ধান্তে শিক্ষা শিবিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

দ্বাদশ শ্রেণির পরে বিই, বি-টেক কোর্সগুলিতে ভর্তির জন্য এত দিন গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন আবশ্যিক ছিল। এআইসিটিই-র নয়া নির্দেশ অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রনিক্স, জৈব প্রযুক্তি, কৃষিবিজ্ঞান, বিজ়নেস স্টাডিজ়, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ১২টি বিষয়ের মধ্যে যে-কোনও তিনটি বেছে নিতে হবে পড়ুয়াদের। শিক্ষকদের বক্তব্য, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেলে দ্বাদশ শ্রেণির স্তরের গণিত ও পদার্থবিদ্যার ভিত শক্ত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই দু’টি বিষয়ই যদি কেউ না-নেন, তাঁরা কী ভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন? ভবিষ্যতেই বা তাঁরা কেমন ইঞ্জিনিয়ার হবেন— প্রশ্ন তুলছে শিক্ষা মহল।

এআইসিটিই জানিয়েছে, যে-সব পড়ুয়া গণিতে দুর্বল, তাঁদের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে গণিতের একটি ব্রিজ কোর্সের ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু এই ব্রিজ কোর্স আদৌ দ্বাদশ শ্রেণির গণিত পাঠ্যক্রমের বিকল্প হতে পারে কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।

Advertisement

এআইসিটিই-র চেয়ারপার্সন অনিল সহস্রবুদ্ধে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গণিত ও পদার্থবিদ্যা ঐচ্ছিক করে দেওয়া হয়েছে, এমন নয়। আসলে তিনটি আবশ্যিক বিষয় বেছে নেওয়ার জন্য আরও বেশি বিকল্প রাখা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন বিষয়ের পড়ুয়ারা আলাদা আলাদা আবশ্যিক বিষয় বাছতে পারবেন। তিনি আরও জানান, যাঁদের দ্বাদশ শ্রেণিতে গণিত ছিল না, তাঁরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইলে প্র‌থম বর্ষে অনেক বেশি গণিত পড়তে হবে। তাঁর দাবি, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির ৫+৩+৩+৪ পদ্ধতির (যেখানে আলাদা করে বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও বাণিজ্য শাখা থাকবে না) সঙ্গে এই নীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে যে-কোনও ছাত্র বা ছাত্রীই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারবেন।

কী বলছে শিক্ষা শিবির? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষিকা নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এআইসিটিই-র এই সিদ্ধান্তের মূলে আছে জাতীয় শিক্ষানীতি। তাতে বলা হচ্ছে, যে-কোনও বিষয় থেকে এসে পড়ুয়ারা অন্য বিষয় পড়তে পারবে। তাঁর প্রশ্ন, “গণিত না-জেনে কী ভাবে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া সম্ভব? অথবা আগে পদার্থবিদ্যা পড়া না-থাকলে পড়ুয়ারা মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বেন কী ভাবে?’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক সাংখ্যায়ন চৌধুরী জানান, লজিক্যাল সেন্স, অ্যানালিটিক্যাল এবিলিটির অঙ্ক আগে থেকে না-করলে পারা সম্ভব না। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ বেশ কিছু বিষয় পড়তে হলে পদার্থবিদ্যা অত্যন্ত জরুরি। যাদবপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক তরুণ নস্করের বক্তব্য, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার ভিত্তি প্রস্তুত করে পদার্থবিদ্যা ও অঙ্ক। এই বিষয়গুলি না-শিখলে কারিগরি শিক্ষার ভিত মজবুত হবে না। ‘‘বিজেপি শিক্ষার গৈরিকীকরণের মাধ্যমে যুক্তিহীন মানসিকতা সৃষ্টির যে-ষড়যন্ত্র করছে, অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যা না-শিখলে তা বলবৎ করতে সুবিধা হবে। এর ফলে ইঞ্জিনিয়ারেরা কেবল টেকনোক্র্যাট হবেন, যুক্তিবাদী মানুষ হবেন না। আমরা এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করছি,” বলেন তরুণবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement