প্রসঙ্গ শিশু ধর্ষণ

অঙ্গচ্ছেদ কি না, ঠিক করুক সংসদ

আর্জি ছিল শিশুকন্যাদের ধর্ষণকারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের শাস্তি দিক সুপ্রিম কোর্ট। সেই আর্জি খারিজ করে শীর্ষ আদালত জানাল, আইনে যে শাস্তির বিধান নেই তার নির্দেশ আদালত দিতে পারে না। তবে সংসদ চাইলে আইন করে এই ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

আর্জি ছিল শিশুকন্যাদের ধর্ষণকারীদের যৌনাঙ্গচ্ছেদের শাস্তি দিক সুপ্রিম কোর্ট। সেই আর্জি খারিজ করে শীর্ষ আদালত জানাল, আইনে যে শাস্তির বিধান নেই তার নির্দেশ আদালত দিতে পারে না। তবে সংসদ চাইলে আইন করে এই ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতিরা।

Advertisement

মহিলা আইনজীবীদের সংগঠনের তরফে শীর্ষ আদালতে আর্জি জানানো হয়েছিল, শিশুকন্যাদের ধর্ষণকারীদের জন্য রাসায়নিকের মাধ্যমে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শাস্তির ব্যবস্থা হোক। বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি এন ভি রমান্নার বেঞ্চের মতে, সংসদ ভারতীয় দণ্ডবিধিতে এই ধরনের শাস্তির বিধানের বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কতখানি বয়স পর্যন্ত ধর্ষণের শিকারকে শিশু বলে ধরা হবে, তা-ও ঠিক করতে হবে। বর্তমানে ১৮-র কম বয়সি সকলকেই শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের মহিলা কৌঁসুলিদের সংগঠনের তরফে শীর্ষ আদালতে যুক্তি দেওয়া হয়, দেশে প্রতি আধ ঘণ্টায় একটি শিশু যৌন নির্যাচনের শিকার হচ্ছে। ২০০৯-এর তুলনায় ২০১৪-য় শিশু ধর্ষণের ঘটনা ১৫১ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।

Advertisement

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২ থেকে ১০ বছরের মধ্যে শিশুদের উপর যৌন হামলার ঘটনা বাড়ছে। আইনজীবী মহালক্ষ্মী পাবনী যুক্তি দেন, ২ থেকে ১০ বছরের শিশুকন্যার উপর যৌন নির্যাতন আর তার বেশি বয়সি কিশোরীর উপর যৌন নির্যাতন এক নয়। কাজেই অভিযুক্তদের মনে ভয় ঢোকানো দরকার।

বিচারপতিরা এই যুক্তি মেনে নিলেও জানিয়ে দেন, আবেগের উপরে ভর করে আইন তৈরি হয় না। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগিও যুক্তি দেন, এই আর্জিতে যুক্তির চেয়ে আবেগের পরিমাণ বেশি। সেই আর্জি মেনে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই বিষয়ে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া ঠিক হবে না। বিচারপতিরা বলেন, ‘আইন তৈরি করা সংসদের কাজ। যা আইনে নেই, আদালত সেই শাস্তির সুপারিশ করতে পারে না। তবে সংসদকে বিষয়টি বিবেচনার পরামর্শ দিতে পারি।’

নির্ভয়া-কাণ্ডের পর ধর্ষণের জন্য কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করতে বর্মা কমিঠি গঠন হয়। সেই কমিটির কাছেও যৌনাঙ্গচ্ছেদের মতো শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্মা কমিটি তা খারিজ করে দেয়। গত বছর মাদ্রাজ হাইকোর্টে একই ধরনের আবেদন জানানো হয়েছিল। মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি এন কিরুবাকরন রায় দিয়েছিলেন, এই ধরনের শাস্তি বর্বরতা মনে হলেও বর্বর অপরাধীদের জন্য বর্বর শাস্তিই দরকার। শাস্তির ভয়েই অপরাধীরা অপরাধ করতে ভয় পাবে। এর আগে দিল্লির একটি নিম্ন আদালতের বিচারকও একই ধরনের শাস্তির প্রয়োজনের কথা বলেছিলেন। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে বুলন্দশহরে ২৮ দিন বয়সি শিশুকন্যার যৌন নির্যাতনের ঘটনার পরে সুপ্রিম কোর্টে যৌনাঙ্গচ্ছেদের আর্জি জানানো হয়।

শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে আমেরিকার বেশ কিছু রাজ্য, চিন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে রাসায়নিকের মাধ্যমে যৌনাঙ্গচ্ছেদের শাস্তি রয়েছে। রাশিয়া, পোল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশও এই ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করছে বলে জানায় মহিলা আইনজীবীদের সংগঠন। অনেকের মতে, অঙ্গচ্ছেদের মতো শাস্তির পক্ষে দাঁড়াতে রাজনৈতিক দলগুলি আগ্রহী নয়। ফলে, সংসদে এই শাস্তির বিধান পাশ হওয়ার আশা কম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement