কল্যমপুড়ি রাধাকৃষ্ণ রাও। —ফাইল চিত্র।
সংখ্যাতত্ত্বকে তিনি বলেছিলেন ‘শেষ আশ্রয়’। সারাটা জীবন অঙ্ক আর সংখ্যাতত্ত্বকে আশ্রয় করেই কাটিয়ে দিলেন কল্যমপুড়ি রাধাকৃষ্ণ রাও। তার মধ্যে চারটে দশকে লেগে রইল কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)-এর নিবিড় ছোঁয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে তিনি নিত্যনতুন সূত্র দিলেন সংখ্যাতত্ত্বের দুনিয়াকে, তৈরি করলেন বহু ছাত্র। বিবিধ সম্মান আর স্বীকৃতিতে তাঁকে নিরন্তর কুর্নিশ জানাল বিশ্ব। আজ সকালে সুদূর আমেরিকার বাফেলোয় ১০২ বছর বয়সে অধ্যাপক সি আর রাওয়ের প্রয়াত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে সংখ্যাতত্ত্বের দুনিয়ায় ইন্দ্রপতনের শোক।
চলতি বছরেই ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ় ইন স্ট্যাটিসটিক্স’ পেয়েছিলেন রাও। ‘সংখ্যাতত্ত্বের নোবেল’ বলা হয় এই পুরস্কারকে। এ ছাড়াও তাঁর সম্মানের ঝুলিতে রয়েছে পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, এস এস ভাটনগর পুরস্কার, রয়্যাল স্ট্যাটিসটিক্যাল সোসাইটির গাই মেডেল (স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক)। আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারলি কলেজ অব সায়েন্সের সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগের ইমেরিটারস অধ্যাপক পদে ছিলেন প্রবীণ বয়সেও।
১৯২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির হাদাগালির এক তেলুগু পরিবারে জন্ম রাওয়ের। ছোটবেলায় কাগজ-কলম ছাড়াই অবলীলায় কষে দিতেন অঙ্ক। ১৭ বছর বয়সেই অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্কে স্নাতকোত্তর পড়তে ঢোকেন। পাশ করে ইচ্ছে জাগে গবেষণার। অতঃপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংখ্যাতত্ত্বে স্নাতকোত্তর পাশ। শহরের সঙ্গে তাঁর সুদীর্ঘ যোগাযোগের সেই সূত্রপাত। আইএসআই কলকাতা জানাচ্ছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতত্ত্বে এমএ-র প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন রাও। সেই পর্ব সেরে এক বছরের প্রশিক্ষণ নিতে ১৯৪১ সালের ১ জানুয়ারি রাও যোগ দেন কলকাতায় আইএসআইয়ের প্রশিক্ষণ বিভাগ (ট্রেনিং সেকশন)-এ। প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের সান্নিধ্যে পুরোদমে চলতে থাকে তাঁর গবেষণার কাজ। প্রশান্তচন্দ্রের প্রয়াণের পরে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত আইএসআইয়ের সচিব ও অধিকর্তার দায়িত্ব সামলান রাও। তবে তর্কযোগ্য ভাবে তাঁর আরও উজ্জ্বল অধ্যায় হল চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইএসআইয়ের রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং স্কুলের প্রধান ও অধিকর্তার পদে থাকা। অবসর নেন সেখান থেকেই।
আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের সদস্য, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট-সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন রাও।একাধিক মহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট হয়েছেন। আমেরিকান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট এক বার বলেছিল, রাওয়ের কাজ শুধু সংখ্যাতত্ত্ব নয়— অর্থনীতি, জেনেটিক্স, নৃতত্ত্ববিদ্যা, ভূতত্ত্ববিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতো নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। সংবাদ সংস্থা