পটনায় নয়া ইনিংস শুরু প্রশান্ত কিশোরের। ছবি: পিটিআই।
ভারতের রাজনীতিতে প্রশান্ত কিশোরের উপস্থিতি এক কথায় বৈপ্লবিক। একা হাতে তিনি বদলে দিয়েছিলেন দেশের নির্বাচনী প্রচারকৌশলের খোলনলচে। সরাসরি সামনে না এলেও পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে জনমানসে প্রভাব ফেলতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। প্রচারকৌশলী হিসেবে সাফল্যের শীর্ষে ওঠার পর এবার সরাসরি রাজনীতিতে নামলেন প্রশান্ত কিশোর। রবিবার থেকে নীতীশকুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড)-র হয়ে নয়া ইংনিস শুরু করলেন তিনি।
পেশায় ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কাজ করতেন রাষ্ট্রপুঞ্জে। সেখান থেকে হয়ে উঠেছিলেন মোদী শিবিরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রচার বিশেষজ্ঞ। এমনও বলা হয়, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির সাফল্যের পেছনে মূল কান্ডারি ছিলেন প্রশান্ত কিশোরই। নির্বাচনী প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার, নানা উদ্ভাবনী কৌশলের জেরে হয়ে উঠেছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডান হাত। তাঁর কৌশলের জেরেই প্রতিপক্ষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচারে দশ গোল দিয়ে বেরিয়ে যেতো বিজেপি শিবির, এই কথা এখনও শোনা যায় রাজনীতির অন্দর মহলে।
২০১২ সালে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেই পেশাদার প্রচার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু। মোদীকে তৃতীয় বারের জন্য গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করার পেছনে তাঁর ভূমিকা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, ২০১৪ সালে মোদীর হয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার কৌশল ঠিক করার দায়িত্বও তাঁর কাঁধেই দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। সেখানেও বাজিমাত করেন তিনি। তাঁর কৌশলের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের সমস্ত পরিকল্পনা। বিপুল ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী।
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের আগেই তৈরি করেছিলেন সিটিজেনস ফর অ্যাকাউন্টেবল গভর্নেন্স। আইআইটি, আইআইএমের মতো দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ম্যাকিনসে, জেপিমর্গ্যান চেজ, গোল্ডম্যান স্যাকসের মত শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক সংস্থাগুলি থেকে মেধাবী ও শীর্ষপদাধিকারী ব্যক্তিদের এক ছাতার তলায় এনে পেশাদার হিসেবে পরামর্শ দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। ‘চায়ে পে চর্চা’, থ্রিডি প্রচার, ‘রান ফর ইউনিটি’-র মত অনুষ্ঠানগুলি তাঁরই মাথা থেকে বেরিয়েছিল, যা জনমানসে মোদীর ভাবমূর্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
আরও পড়ুন: জেএনইউ-এর রইল বামেদের হাতেই, চারটি পদেই বড় মার্জিনে হার এবিভিপির
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের পর অবশ্য নরেন্দ্র মোদী-প্রশান্ত কিশোর সখ্যতা নষ্ট হয়। যদিও প্রচারকৌশলী হিসেবে তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। নিজের উপস্থিতির প্রমাণ আবার তিনি দেন ২০১৫ বিহার বিধানসভার নির্বাচনে। দেশজুড়ে প্রবল মোদী হাওয়ার মধ্যেও বিহারের সবকটি বিরোধী দলকে একজোট করে নীতীশকুমারকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জেতাতে তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীতীশের সঙ্গে সখ্যতার শুরুও তখনই।
এর পর পঞ্জাব। কংগ্রেসের হয়ে পঞ্জাবে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহকে প্রধানমন্ত্রী করার পেছনেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাঁর ভূমিকা।
আরও পড়ুন: লালু চাইলেই বাবার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়াবেন রামবিলাসের মেয়ে
তাঁর সাফল্যের ট্র্যাকরেকর্ড দেখে ২০১৭র উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্বভার তাঁর হাতেই সঁপে দিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। যদিও উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসকে নির্বাচনী বৈতরণী পার করাতে পারেননি প্রশান্ত কিশোর। মাত্র সাতটি আসন জিতে ভরাডুবি হয়েছিল কংগ্রেসের, প্রথমবারের জন্য ব্যর্থতার স্বাদ পেয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। তখন থেকেই নয়া ইনিংস শুরু করার কথা ভাবছিলেন তিনি। বিভিন্ন মহলে সেই ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছিল। এই মুহূর্তে অন্ধ্রপ্রদেশে জগন্মোহন রেড্ডির পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করলেও আর দেরি না করে সরাসরি রাজনীতিতে নেমে পড়লেন প্রশান্ত কিশোর, প্রথম বারের জন্য।
রবিবার পটনায় জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশকুমারের উপস্থিতিতে শুরু হল প্রশান্ত কিশোরের নয়া ইনিংস। এখন আর পেছন থেকে কলকাঠি নাড়া নয়, রাজনীতির ময়দানে সামনের সারিতেই দাঁড়াতে হবে তাঁকে।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)