—প্রতীকী চিত্র।
‘এক দেশ এক ভোট’ নীতির পক্ষে অন্যতম প্রধান যুক্তি হল, এতে অর্থ সাশ্রয় হবে। লোকসভা ও সব রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন এক সঙ্গে করিয়ে ভোটের পিছনে বিপুল খরচ কমানোর যুক্তিতেই ওই নীতির পক্ষে বার বার সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। দেশে যদি সত্যিই ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকর হলে ইভিএম পিছু কত খরচ হতে পারে, তার হিসাব কেন্দ্রীয় সরকারকে দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
কমিশন কেন্দ্রকে জানিয়েছেন, দেশের লোকসভায় ও সব রাজ্যে বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হলে প্রতি ১৫ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে শুধুমাত্র ইভিএমের জন্য। আইন মন্ত্রকে পাঠানো পত্রে জানানো হয়েছে, একটি ইভিএমের আয়ু সাধারণত ১৫ বছর হয়। অর্থাৎ, একটি ইভিএম সেট তিনটি নির্বাচনে ব্যবহার করা যেতে পারে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে বুথকেন্দ্রের সংখ্যা হবে ১১ লক্ষ ৮০ হাজার। সেই হিসাবে ধরলে প্রতি বুথকেন্দ্রে দু’টি ইভিএম সেটের দরকার পড়বে। একটি লোকসভার জন্য। অন্যটি বিধানসভার জন্য। সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমিশন সরকারকে জানিয়েছে, এ ছাড়াও জরুরি পরিস্থিতির জন্য কিছু ইভিএম রিজ়ার্ভে রেখে দিতে হয়। সেই হিসাবে সব মিলিয়ে ব্যালট ইউনিট লাগবে ৪৬,৭৫,১০০টি, কন্ট্রোল ইউনিট লাগবে ৩৩,৬৩,৩০০টি এবং ভিভিপ্যাট লাগবে ৩৬,৬২,৬০০টি। গত বছরে বাজারে প্রতি ব্যালট ইউনিটের দাম ছিল ৭,৯০০ টাকা। একটি কন্ট্রোল ইউনিটের দাম ছিল ৯,৮০০ টাকা। আর ভিভিপ্যাট প্রতি খরচ ১৬ হাজার টাকা।
২০১৪-য় দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ সওয়াল করছেন মোদী। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের সঙ্গেই যাতে সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট করানো সম্ভব হয়, সে চেষ্টা তিনি করেননি। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটে জিতে এসে প্রথমে লাল কেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতাতেও একই সওয়াল করেন তিনি। যুক্তি দিয়েছিলেন, এতে ভোটের খরচ কমবে। প্রতি বছরই দেশে কোনও না কোনও নির্বাচন থাকে। বার বার নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি প্রযোজ্য হয়। তাতে সরকারি কাজ ব্যাহত হয়। তার পরে বহু বার, বহু মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী এই যুক্তি দিলেও তা রূপায়ণে কাজের কাজ কিছু হয়নি। মাসখানেক আগে আচমকা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে কমিটি তৈরি হয়েছে। বিরোধী শিবিরে হইচই শুরু হয়েছিল— বিজেপি কি ২০২৪-এ লোকসভা ও সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট এক সঙ্গে করাতে চাইছে? কিছু দিন যেতেই আইন কমিশন স্পষ্ট করেছে, আপাতত ২০২৯-কে লক্ষ্য রেখে তারা কাজ শুরু করেছে।