তাণ্ডব: তিতলির দাপটে হাইওয়েতে উল্টেছে ট্রাক ও ট্রেলার। বৃহস্পতিবার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে। ছবি: রয়টার্স।
পূর্বাভাস মতো বৃহস্পতিবার ভোরে ওড়িশার দক্ষিণ উপকূলে আছড়ে পড়েই আট জনের প্রাণ কাড়ল ঘূর্ণিঝড় তিতলি। মৃতদের মধ্যে ছ’জন মৎস্যজীবী। সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। প্রবল হাওয়া ও লাগাতার বৃষ্টিতে তছনছ ওড়িশা ও অন্ধ্রের বড় অংশ। গাছ উপড়ে বন্ধ রাস্তাঘাট। ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার বিদ্যুতের খুঁটি। লাইন ছিঁড়ে বন্ধ টেলি-যোগাযোগ। আজও খোলেনি ওড়িশার স্কুল-কলেজ। সব মিলিয়ে স্তব্ধ জনজীবন।
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, মৃতেরা অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম ও বিজয়নগরম জেলার বাসিন্দা। শ্রীকাকুলামে গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৬২ বছরের এক প্রৌঢ়ার। বাড়ি চাপা পড়ে সেখানে মারা গিয়েছেন ৫৫ বছরের এক ব্যক্তিও।
আজ ভোর সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে গোপালপুরের দক্ষিণ-পশ্চিমে শ্রীকাকুলামের পালাসায় আছড়ে পড়ে তিতলি। সঙ্গে ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি। প্রবল দুর্যোগের মুখে পড়ে উত্তর উপকূলীয় তিন জেলা— শ্রীকাকুলাম, বিজয়নগরম ও বিশাখাপত্তনম। অন্ধ্রের গোদাবরী জেলার উপারায় বাড়ির ভিতরে ঢুকে গিয়েছে সমুদ্রের জল। শ্রীকাকুলামে গাছ পড়ে বন্ধ রাস্তাঘাট। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় অন্ধ্রের অন্তত সাড়ে চার হাজার জেলা ও ছ’টি শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত হয়েছে। জেলার প্রশাসনিক প্রধান কে ধনঞ্জয় রেড্ডি বলেছেন, ‘‘আমাদের আশঙ্কা, ৬-৭ হাজার বিদ্যুতের খুঁটি উপড়েছে। তার মানে ৪-৫ লাখ মানুষ অন্ধকারে।’’ ক্ষতির খতিয়ান এখনও সম্পূর্ণ বোঝা যায়নি বলে জানান তিনি।
ওড়িশায় ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে গঞ্জাম, গজপতি, খুরদা, পুরী, জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রপড়া, ভদ্রক ও বালেশ্বর জেলা। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গজপতি। সেখানকার প্রায় তিন লাখ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়েছে সরকার। মু্খ্যমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে গোদাবরীর কাকিনাড়া থেকে যে ৬৭টি মাছ-ধরা নৌকা সমুদ্রে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৬৫টি ফিরে এসেছে। বাকি দু’টির খোঁজ চলছে।
যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী কয়েক দিনে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে ওড়িশার কোনও কোনও এলাকায়। মুখ্যসচিব এ পি পাধি বলেছেন, ‘‘পশ্চিমের কিছু অংশ ছাড়া গোটা রাজ্যেই কম-বেশি বৃষ্টি হতে পারে। উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে বন্যার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’’ শুক্রবার সকালের মধ্যে শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে তিতলি।
পুজোর মরসুমে পুরীতে স্বভাবতই পর্যটকের ভিড়। হঠাৎ তিতলির আগমনে হতাশ তাঁরা। সমুদ্রের ধারে অস্থায়ী সব দোকান বুধবার তুলে দেয় পুলিশ। বৃহস্পতিবারও বসতে দেওয়া হয়নি তাদের। একটি হোটেলের ম্যানেজার শঙ্করনাথ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ঝোড়ো হাওয়া কমলেও সমুদ্র কিন্তু অশান্ত। প্রচুর লাইফ গার্ড রয়েছেন। পর্যটকদের সমুদ্রে নামায় আজও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’’
কর্মসূত্রে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা অরূপ বসু কয়েক দিনের জন্য পুরী এসেছিলেন। বললেন, ‘‘পৃথিবীর বহু সমুদ্র দেখেছি। কিন্তু এমন উত্তাল রূপ দেখিনি। বেশ ভয় পেয়েছিলাম। বুধবারটা হোটেলেই কেটেছে।’’ অরূপবাবু জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বৃষ্টি কমলেও সন্ধ্যা থেকে ফের টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়।
বালেশ্বরে কর্মরত বেসরকারি টেলিকম আধিকারিক গৌরব রঞ্জন জানান, সেখানে বুধবার সারা দিন ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে। আলো ছিল না। অনেকেই ভয়ে বাইরে বেরোননি। ঝড়ে কয়েকটি মোবাইল টাওয়ারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গৌরব বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আবহাওয়া পরিষ্কার হতে থাকে। বুঝলাম ফাঁড়া কেটে গিয়েছে।’’