অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে অষ্টম সমন পাঠাল ইডি। — ফাইল চিত্র।
আবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে তলব করল ইডি। দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় এই নিয়ে আট বার আপের প্রধানকে সমন পাঠাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর আগে সাত বারই কোনও না কোনও কারণ দেখিয়ে ইডির তলব এড়িয়ে গিয়েছিলেন কেজরী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইডির অষ্টম তলবে কি সাড়া দেবেন তিনি?
মঙ্গলবার ইডি নতুন সমন পাঠায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, আগামী ৪ মার্চ তাঁকে দিল্লির ইডি অফিসে যেতে বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, দিল্লির আবগারি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতেই কেজরীওয়ালকে ডাকা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি কেজরীওয়ালকে সপ্তম বারের জন্য সমন পাঠিয়েছিল ইডি। কিন্তু সেই মতো সোমবার তিনি ইডি দফতরে হাজিরা দেননি।
সোমবার সকালে আপের তরফে জানানো হয়, গোটা বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই ইডি যেন এই বিষয়ে ধৈর্য ধরে। কেজরীওয়াল নিজে অবশ্য গরহাজির থাকার কোনও ব্যাখ্যা দেননি। আপের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘‘বিচারাধীন মামলার পরবর্তী শুনানি ১৬ মার্চ। তাই রোজ সমন না পাঠিয়ে ইডি বরং ধৈর্য ধরুক এবং আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করুক।” তবে মঙ্গলবার দেখা গেল আবার হাজিরা দেওয়ার জন্য কেজরীকে সমন পাঠানো হল। যদিও এখনও পর্যন্ত এই সমন সম্পর্কে আপ বা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
উল্লেখ্য, দিল্লির আবগারি দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় পঞ্চম বার ইডির সমন এড়ানোর পর কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ইডি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে গত ৩ ফেব্রুয়ারি আবেদন জানানো হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি সেই মামলার শুনানিতে বিচারক দিব্যা মলহোত্র নির্দেশ দিয়েছিলেন, আদালতে হাজির হয়ে জবাবদিহি করতে হবে আপের প্রধানকে। তাঁকে জানাতে হবে কেন তিনি বার বার ইডির তলব এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি ভার্চুয়াল শুনানিতে হাজিরা দিয়ে কেজরী জানান, দিল্লি বিধানসভায় আস্থাভোট থাকার কারণে তিনি সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে পারছেন না। আদালত তাঁকে আগামী ১৬ মার্চ সশরীরে আদালতে হাজিরা দেওয়ার অনুমতি দেয়। আদালতের ‘ছাড়পত্র’ হাতিয়ার করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ইডির ষষ্ঠ এবং সপ্তম সমন এড়িয়ে যান। আইনজীবীদের একাংশের মতে, ইডির অষ্টম তলবও এড়িয়ে যাবেন কেজরীওয়াল। আর এ বারও আদালতের নির্দেশকে ‘হাতিয়ার’ করবেন তিনি।
দিল্লি সরকারের ২০২১-২২ সালের আবগারি নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। অভিযোগ ছিল, নতুন নীতির ফলে বেশ কিছু মদ ব্যবসায়ী সুবিধা পাচ্ছিলেন। এই নীতি প্রণয়নের জন্য যাঁরা ঘুষ দিয়েছিলেন, তাঁদের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছিল বলেও অভিযোগ। যদিও আপ সরকার সেই অভিযোগ মানেনি। সেই নীতি যদিও পরে খারিজ করা হয়। তবে এই ‘দুর্নীতি’র অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লির তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। গত বছর এপ্রিলে এই মামলার তদন্তে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে তলব করেছিল সিবিআই। টানা ন’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তাঁকে। পরে ওই মদ-কাণ্ডে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের খোঁজে পৃথক তদন্ত শুরু করে ইডি। সেই সূত্র ধরেই একাধিক বার কেজরীওয়ালকে তলব করে তারা। অন্য দিকে, এই মামলায় এখনও পর্যন্ত আপের দুই প্রবীণ নেতা, দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া এবং রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহ গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তাঁরা দু’জনেই তিহাড় জেলে বন্দি।