স্বাধীনতা দিবসের আগে বক্তৃতা দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: পি টি আই।
ভারতীয় অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে বলে জানালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। স্বাধীনতা দিবসের আগে তাঁর বার্তা, নরেন্দ্র মোদী সরকার চাইলে ফের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭ থেকে ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে পারে।
স্বাধীনতা দিবসের আগে বক্তৃতায় অর্থনীতি নিয়ে আশার কথাই শোনা গিয়েছে রাষ্ট্রপতির মুখে। গত দু’বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের কম থাকলেও এখন অর্থনীতি ফের চাঙ্গা হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি।
প্রণববাবুর কথায়, “বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিস্থিতি ভালই। মুদ্রাস্ফীতিও কমছে। উৎপাদন শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।” তবে খাদ্যসামগ্রীর দাম এখনও উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করেন তিনি।
প্রণববাবুর মতে, তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম কোনও দল স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারের নীতি, ব্যবস্থার সংস্কার সম্ভব। গোড়া থেকেই আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদীও। তবে বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সীমা বাড়ানোর মতো উদ্যোগ ইতিমধ্যেই ধাক্কা খেয়েছে বিরোধীদের বাধায়। তাঁদের চাপে আজই ওই বিল রাজ্যসভার সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭ থেকে ৮ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলে কার্যত মোদী সরকারের জন্য লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
আর্থিক সংস্কারের সঙ্গে সরাসরি দারিদ্রের মোকাবিলাকে জুড়েছেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর কথায়, “আর্থিক সংস্কারের ফল গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই হবে।” গরিবি কমানোর বদলে এ বার গরিবি পুরোপুরি হটানোর সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, “দারিদ্র ৬০ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গরিবি পুরোপুরি নির্মূল করতে হবে।” খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে গরিব মানুষ আর একটি প্রজন্ম ধরে অপেক্ষা করতে পারে না বলে সাফ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে বহস্পতিবার মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি। প্রণববাবুর কথায়, “দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার শেষে দেশে সাক্ষরতার হার ৮০ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের সন্তানরা কি দক্ষ পেশাদার ও ভালো নাগরিক হওয়ার শিক্ষা পাচ্ছেন?”
এশিয়া ও আফ্রিকার নানা দেশে কট্টরপন্থীদের উত্থানের পরে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি। দেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বক্তব্য, “যারা হিংসায় নজর দেয় তারা ভারতবাসীর মন জানে না। শান্তি ছাড়া যে আর্থিক বা সামাজিক প্রগতি হয় না তা ভারতবাসী জানেন।”
তাঁর কথায়, “এশিয়া-আফ্রিকার নানা প্রান্তে কট্টরপন্থীরা নানা দেশের ভৌগোলিক সীমা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ভারতে কট্টরপন্থার কোনও স্থান নেই। কিন্তু ওই কট্টরপন্থীদের কাজের প্রভাব ভারতেও এসে পড়বে।” প্রণববাবুর মতে, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতকে কঠোর হতে হবে। আবার কূটনীতির মাধ্যমে বিশ্বকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে, কট্টরপন্থীদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার মতো ঘটনার প্রতি উদাসীন থাকলে বড় বিপদ হবে। ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় সম্প্রতি প্রতিষ্ঠা হয়েছে মৌলবাদী আইএসআইএস জঙ্গিদের রাজত্ব। ইরাকের মসুল থেকে বেশ কয়েক জন ভারতীয়কে অপহরণ করেছিল জঙ্গিরা। তাঁদের মধ্যে ৩৯ জনের এখনও খোঁজ মেলেনি। সম্প্রতি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিমানহানা শুরু করলেও ইরাক-সিরিয়া নিয়ে আমেরিকা সঠিক ভাবে উদ্যোগী হয়নি বলেই ধারণা আন্তর্জাতিক শিবিরের। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “স্বাধীনতা কেবল উৎসব পালনের উপলক্ষ্য নয়, এটা একটা চ্যালেঞ্জও।” তাই তাঁর বার্তাও সাফ। বিপুল জনাদেশ পেয়ে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদী সরকার এ বার সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করুক।