Muthulakshmi Reddi

একঘরে করেছিল সমাজ, অসংখ্য অন্ধকার ঘরে আলো জ্বেলেছিলেন দেবদাসীর এই চিকিৎসক-কন্যা

বাংলায় যে বছর কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় তৎকালীন বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিগ্রি লাভ করলেন, সে বছর অর্থাৎ ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই, আজকের তামিলনাড়ুর তৎকালীন এক নেটিভ স্টেট পুড়ুকোট্টাইতে জন্ম মুথুলক্ষ্মীর। তাঁর বাবা এস নারায়ণস্বামী আইয়ার ছিলেন মহারাজাস কলেজের অধ্যক্ষ। মা চন্দ্রাম্মাল ছিলেন মন্দিরের প্রাক্তন দেবদাসী। তাঁকে বিয়ে করার জন্য রক্ষণশীল সমাজ একঘরে করেছিল নারায়ণস্বামীকে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ১৩:২৬
Share:
০১ ১০

কৈশোরে পা পড়তেই মা বন্ধ করে দিলেন স্কুলে যাওয়া। শুরু হল মেয়েকে পাত্রস্থ করার উদ্যোগ। কিন্তু বেঁকে বসল কিশোরী নিজে। বিয়ে সে করবে না, বাড়িতেই চালিয়ে যাবে পড়াশোনা। পরবর্তী কালে তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন লেখাপড়াকে হাতিয়ার করে সমাজের বুকে কত ভাবে স্থাপন করা যায় মাইলফলক। দেবদাসীকন্যা বলে সমাজ একঘরে করেছিল তাঁদের। কিন্তু তিনি আলো জ্বেলেছিলেন সমাজের অসংখ্য অন্ধকার ঘরে। তিনি মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি।

০২ ১০

বাংলায় যে বছর কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় তৎকালীন বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিগ্রি লাভ করলেন, সে বছর অর্থাৎ ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই, আজকের তামিলনাড়ুর তৎকালীন এক নেটিভ স্টেট পুড়ুকোট্টাইতে জন্ম মুথুলক্ষ্মীর। তাঁর বাবা এস নারায়ণস্বামী আইয়ার ছিলেন মহারাজাস কলেজের অধ্যক্ষ। মা চন্দ্রাম্মাল ছিলেন মন্দিরের প্রাক্তন দেবদাসী। তাঁকে বিয়ে করার জন্য রক্ষণশীল সমাজ একঘরে করেছিল নারায়ণস্বামীকে।

Advertisement
০৩ ১০

প্রাইভেট ক্যান্ডিডেট হিসেবে মুথুলক্ষ্মী ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯০২ সালে। এরপরই বাঁধল গোল। তিনি ভর্তি হতে চাইলেন মহারাজাস কলেজে। মেয়ে হয়ে কলেজে ছেলেদের সঙ্গে পড়বে? তীব্র প্রতিবাদ করলেন অভিভাবকরা। অনেক ছাত্র কলেজ থেকে নাম কাটিয়েও নিলেন। কিন্তু মুথুলক্ষ্মী অনড়। শেষে তাঁর জেদের কাছে হার মেনে পুড়ুকোট্টাইয়ের তৎকালীন রাজা মার্তণ্ড ভৈরব থোণ্ডামান মুথুলক্ষ্মীকে কলেজে পড়ার অনুমতি দিলেন।

০৪ ১০

১৯০৭ সালে তিনি ভর্তি হলেন মাদ্রাজ মেডিক্যাল কলেজে। ১৯১২ সালে তাঁর ডাক্তারি-পাঠ শেষ হল। গভর্নমেন্ট মেটারনিটি অ্যান্ড অপথ্যালমিক হসপিটালে তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা হাউস সার্জেন। ডাক্তার হয়েই তিনি ‘ওয়েট নার্সিং’-এর বিরুদ্ধে সরব হলেন। এই প্রথায় দলিত মহিলারা অভিজাত বংশের নবজাতকদের স্তন্যপান করাতেন। এই প্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতা গডে় তোলেন মুথুলক্ষ্মী।

০৫ ১০

১৯১৪ সালে বিয়ে করেন চিকিৎসক সুন্দর রেড্ডিকে। বিয়ের পরে নতুন উৎসাহে কাজ শুরু করলেন মুথুলক্ষ্মী। অ্যানি বেসান্তের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘উইমেন্স ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’। ১৯২৭ সালে এই প্রতিষ্ঠান তাঁকে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে মনোনীত করল। সর্বসম্মতিক্রমে তিনি ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। ফলে তিনিই পরাধীন ভারতের প্রথম মহিলা লেজিসলেটর।

০৬ ১০

আজীবন তিনি মহিলাদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। নারী পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বন্ধ করেছিলেন বহু পতিতালয়ের দরজা। দেবদাসী প্রথা চিরতরে নির্বাসিত করার জন্য উদ্যোগী ছিলেন এই দেবদাসী-কন্যা। কিন্তু লবণ আন্দোলনের জেরে গাঁধীজিকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মুথুলক্ষ্মী কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করেন ১৯৩০ সালে। ফলে ‘মাদ্রাজ দেবদাসিস ( প্রিভেনশন অব ডেডিকেশন) অ্যাক্ট’ পাশ হয় পরে, ১৯৪৭ সালে। ছবি:সোশ্যাল মিডিয়া

০৭ ১০

১৯৩১ সালে তিনি আদিয়ারে নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘আভ্ভাই হোম’। আশ্রয় দিয়েছিলেন বাল্যবিধবা, সন্তান-সহ পরিত্যক্ত স্ত্রী, অনাথ শিশুকন্যা এবং কুমারী মায়েদের। সেই আশ্রয় এখনও আছে। অনেক বেড়েছে কাজের পরিধি।

০৮ ১০

ক্যানসার গবেষণাতেও তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৪ সালে একটি ছোট্ট কুটিরে তিনি শুরু করেছিলেন ‘আদিয়ার ক্যানসার ইনস্টিটিউট’। এখন সেটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে ক্যানসার নিয়ে গবেষণাতেও। কর্কটরোগে বোনকে হারানোর দুঃখ এভাবে কাজের মাধ্যমেই ভুলতে চেয়েছিলেন মুথুলক্ষ্মী।

০৯ ১০

এ বার থেকে তাঁর জন্মদিন ৩০ জুলাই তামিলনাড়ুতে প্রতি বছর পালিত হবে ‘হাসপাতাল দিবস’ হিসেবে। সোমবারই এই ঘোষণা করেছে তামিলনাড়ু সরকার। ১৩৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মুথুলক্ষ্মীকে সম্মান জানিয়ে মঙ্গলবার ডুডল বানিয়েছে গুগল।

১০ ১০

জীবনভর কাজের স্বীকৃতি এসেছিল নানা ভাবে। ১৯৫৬ সালে ভূষিত হয়েছিলেন পদ্মভূষণ সম্মানে। কর্মযোগী মুথুলক্ষ্মী প্রয়াত হন ৮১ বছর বয়সে, ১৯৬৮-র ২২ জুলাই। তাঁর হাতে তৈরি সামাজিক কল্যাণমূলক সংস্থাগুলি কাজ করে চলেছে আজও। তাদের মাঝেই বেঁচে আছেন তিনি এবং তাঁর আদর্শ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement