অজিত ডোভাল এবং ম্যাকমাস্টার। —ফাইল চিত্র।
পাক সরকারের মদতে পুষ্ট জঙ্গিদের হাতে মারতে হলে, আগে ভাতে মারতে হবে। হোয়াইট হাউসের সঙ্গে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক দৌত্যে এই বিষয়টিকেই মূল মন্ত্র করে এগোচ্ছে সাউথ ব্লক।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে দিল্লি বলেছে, নিরাপত্তা বা সামরিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়। আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি বৃহত্তর আর্থিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তবেই পথে আসবে ইসলামাবাদ। আমেরিকার ন্যাটো-বহির্ভূত প্রধান শরিকদের তালিকা থেকে পাকিস্তানকে বাদ দেওয়ার দাবিও তোলা হচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এখন দু’দিনের মার্কিন সফরে ওয়াশিংটনে। সেখানে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার-সহ শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তিনি। আগামী মাসেই দু’দেশের বিদেশমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক বসবে আমেরিকায়। পাকিস্তানকে আর্থিক ভাবে সম্পূর্ণ কোণঠাসা করাটাই আপাতত এই দৌত্যের লক্ষ্য। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘আমরা চাই না কোনও দেশের সাধারণ মানুষ আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়ুন। কিন্তু পাকিস্তান বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের নামে বিদেশি অর্থ নিয়ে জঙ্গিদের পিছনে ঢালছে। অর্থের জোগান বন্ধ হলে সে দেশের সরকার তাদের জঙ্গি-সহায়ক অর্থনীতি বদলাতে বাধ্য হবে।’’
১৯৮টি দেশের ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর সম্প্রতিক বৈঠকের জন্য বিস্তারিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেছিল নয়াদিল্লি। উদ্দেশ্য ছিল একই। সেখানে তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হয়েছিল, জঙ্গি সংগঠনগুলিকে পাকিস্তান বছরের পর বছর আর্থিক সহায়তা করে চলেছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ চাপ তৈরি করে ইসলামাবাদের উপর। কিছুটা কোণঠাসা হয়ে হাফিজ সইদকে জঙ্গি তালিকাভুক্ত করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।
এফএটিএফ-পরবর্তী কৌশল হিসেবেই আমেরিকার সঙ্গে বর্তমান দৌত্য। নয়াদিল্লির শীর্ষ কর্তারা যুক্তি-সহ হোয়াইট হাউসের সামনে দাবি রাখছেন যে, ইসলামাবাদকে ‘মেজর নন ন্যাটো অ্যালাই’ (এমএনএনএ) বা ন্যাটো-বর্হিভূত মুখ্য শরিকদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এই তালিকায় থাকার সুবাদে পাকিস্তান আমেরিকার অত্যাধুনিক অস্ত্র ভাঁড়ার এবং প্রযুক্তি নাগালের মধ্যে পাচ্ছে। বিভিন্ন কূটনৈতিক এবং আর্থিক সুবিধাও পাচ্ছে। সাউথ ব্লকের দাবি, পাক সামরিক এবং কূটনৈতিক যে সব কর্তার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলির আঁতাঁত প্রকাশ্যে এসেছে, তাঁদের উপরেও চাপ তৈরির কোনও মেকানিজম গঠন হোক। ভারত মনে করিয়ে দিতে চাইছে যে, চিনের সঙ্গে যতই কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা বাড়াক পাকিস্তান, সে দেশের পরিষেবা এবং পণ্যের সব চেয়ে বড় রফতানি-গন্তব্যটি কিন্তু এখনও আমেরিকাই।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে জঙ্গি-সেনা সংঘর্ষ, নিহত ১০
এর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেডিং প্রোগ্রাম’টি পর্যালোচনার জন্যও আন্তর্জাতিক স্তরে দরবার করতে চাইছে নয়াদিল্লি। এই নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলবেন কর্তারা। এই যোজনায় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সুফলপ্রাপ্ত দেশটির নাম পাকিস্তান।
এর ফলে পাকিস্তানের বস্ত্রশিল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্পপণ্য ইউরোপের দেশগুলির বাজারে বিনা শুল্কে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, উন্নত দেশগুলির কাছে থেকে পাওয়া এই সহায়তার বিনিময়ে পাকিস্তানকে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের প্রমাণ দিতে হয়।
সাউথ ব্লকের বক্তব্য, মানবসম্পদ উন্নয়নের নামে ইসলামাবাদ আসলে সন্ত্রাসবাদীদের অস্ত্র, অর্থ এবং নিরাপত্তাই জুগিয়ে গিয়েছে গত বিশ বছর ধরে। এ বার অবিলম্বে এই সুবিধাগুলি তুলে নেওয়া প্রয়োজন বলেই ম্যাকমাস্টারকে জানিয়েছেন ডোভাল।