জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। ছবি: পিটিআই
জিএসটি ক্ষতিপূরণ নিয়ে ঐকমত্য অধরাই রইল।
জিএসটি পরিষদের বৈঠকে এক দিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়ে দিলেন, জিএসটি থেকে রাজ্যগুলির যে আয় কম হয়েছে, তা মেটাতে কেন্দ্রের পক্ষে ঋণ নেওয়া সম্ভব নয়। রাজ্যকেই ধার করতে হবে। কেন্দ্রের কথা মেনে ঋণ নিতে রাজি বিজেপি এবং সমমনোভাবাপন্ন দল-শাসিত ২১টি রাজ্য। উল্টো দিকে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, এবং কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলি মিলিয়ে মোট ১০টি রাজ্য ‘কেন্দ্রকেই ধার করে ক্ষতিপূরণ মেটাতে হবে’ এই দাবিতে অনড়। গত সোমবারের পরে আজ ফের সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকেও জট না-কাটায় সীতারামন বিরোধী অর্থমন্ত্রীদের অনুরোধ করেন, “আপনারা উদার হয়ে সিদ্ধান্ত নিন। কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে নিন।” কিন্তু তাঁরা রাজি হননি।
সীতারামন দু’টি প্রস্তাব রেখেছিলেন রাজ্যগুলির সামনে। এক, জিএসটি চালুর ফলে যে আয় কমেছে, রাজ্যগুলি সেই ৯৭ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে ধার করতে পারে। অথবা জিএসটি চালু ও কোভিডের জেরে মোট যে ২.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা আয় কম হয়েছে, তার পুরোটাই ধার করতে পারে। জিএসটি পরিষদে ঐকমত্য না-হওয়ায় যে ২১টি রাজ্য সীতারামনের প্রথম প্রস্তাবটিতে রাজি, তারা বাজার থেকে ঋণ নিতে শুরু করবে। কম সুদে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে সাহায্য করবে অর্থ মন্ত্রক। আজ তিনি বলেন, ‘‘ঐকমত্য হচ্ছে না বলে যে রাজ্যগুলি ধার করতে তৈরি, তাদের আটকে রাখা যায় না। কারণ সংবিধানে প্রত্যেক রাজ্যের নিজের মতো ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।’’ কিন্তু যে সব রাজ্য নিজেরা ঋণ নিতে রাজি নয়, তাদের কী হবে? সীতারামনের জবাব, “তাদের সঙ্গেও কথা বলব। তারা ঋণ নিতে এগিয়ে এলে তাদেরও সাহায্য করা হবে। পুরো ঋণই শোধ হবে ২০২২-এর জুনের পরেও সেস আদায় থেকে। রাজ্যের অন্য কোনও আয়ে হাত দিতে হবে না।” সীতারামনের যুক্তি, কেন্দ্র বাজার থেকে বাড়তি ধার করতে গেলেই সরকারি ঋণপত্রে সুদের হার বেড়ে যাবে। তার ভিত্তিতে রাজ্য এবং বেসরকারি সংস্থারও ঋণের সুদের হার ঠিক হয়। সকলকেই বেশি সুদে ঋণ নিতে হলে রাজ্যের ঋণের বোঝা বাড়বে, বেসরকারি লগ্নিতে ধাক্কা লাগবে।
তা হলে এই বিবাদে লাভ কী হল? বিরোধী অর্থমন্ত্রীরা বলছেন, তাঁরা দেখিয়ে দিলেন, অনেক রাজ্যই কেন্দ্রের সঙ্গে একমত নয়। বৈঠকের আগেই পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র টুইটে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘আজ কি মোদীর নির্দেশে নির্মলা সীতারামন ১০টি রাজ্যকে অবজ্ঞা করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাদের কণ্ঠরোধ করবেন? যদি তিনি তা করেন, তা হলে ইতিমধ্যেই ভেন্টিলেটরে চলে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর জন্য মৃত্যুর পরোয়ানা হবে।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় ভেলোরের হাসপাতাল
সীতারামন অবশ্য একে ‘বিবাদ’ বা ‘কেন্দ্র বনাম রাজ্যের যুদ্ধ’ না-বলে নিছক ‘মতপার্থক্য’ বলে দাবি করেছেন। তবে তিনি যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে পারেননি, তা-ও হতাশ গলায় মেনে নিয়েছেন। আজ ভোটাভুটিতেও যেতে চাননি সীতারামন। কারণ, একাধিক অর্থমন্ত্রী তাঁকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, অরুণ জেটলির আমলে যাবতীয় সিদ্ধান্তই ঐকমত্যের ভিত্তিতে হত। এক অর্থমন্ত্রী এ-ও বলেন যে, ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে ভোটাভুটি হলে তা বেআইনি হবে।
আরও পড়ুন: এফআইআর নিয়ে নাটক, আদালতে প্রশ্ন, ‘আপনার মেয়ে হলে পারতেন’