রাজভবনে শপথ নিচ্ছেন নীতীশ কুমার। — ছবি: এক্স।
সকালে ‘মহাগঠবন্ধন’ জোটের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। বিকেলে সেই নীতীশ কুমারই আবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। সমর্থন করল বিজেপি। এই প্রেক্ষিতে ‘খেলা এখনও বাকি’ আছে, প্রতিক্রিয়া সদ্য ভেঙে যাওয়া সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের। বিগত কয়েক দিন ধরেই নীতীশের গতিবিধি নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছিল বিহার তথা জাতীয় রাজনীতিতে। নীতীশ যে আবার এনডিএতে ফিরতে পারেন, সেই জল্পনা ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছিল। নীতীশকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু কিছুই কাজে আসেনি। নীতীশ সেই ফিরেছেন বিজেপির কাছেই। বিহারে পুনর্গঠিত এনডিএ-র মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি শপথও নিয়ে ফেললেন রবিবার বিকেলেই। ফলে বড়সড় ধাক্কা খেল ‘ইন্ডিয়া’ ব্লক। লোকসভা ভোটে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এমনিতে ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের টানাপড়েন চরমে। তার মধ্যেই লোকসভার আগে নীতীশের ইস্তফা এবং বিজেপির সমর্থন নিয়ে একই দিনে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথে বিরোধীদের ইন্ডিয়া ব্লক বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন, জোট ছেড়ে নীতীশের বেরিয়ে যাওয়ায় ইন্ডিয়ার ক্ষতি তো হবেই না, বরং লাভ হবে। তাঁর এই জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াতে বিহারে লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোট ভাল ফলই করবে বলেও মনে করেন তৃণমূল নেত্রী। এ দিকে নীতীশের দলের তরফে জোট ভাঙার কারণ হিসাবে নতুন একটি তত্ত্ব তুলে ধরা হচ্ছে। নীতীশের দল জেডিইউয়ের নেতা কেসি ত্যাগী বলছেন, ‘‘প্রথম থেকেই ‘ইন্ডিয়া’র নেতৃত্বের দখল নিতে চেয়েছে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে পড়েছিল যে, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসাবে ষড়যন্ত্র করে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম বলিয়ে নেয় তারা। আর সেই কাজ কংগ্রেস করিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে।’’ যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, মমতা আর নীতীশকে কোনও ভাবেই মেলানো যাবে না। মমতা বরাবর বিজেপি বিরোধী ছিলেন, আছেন এবং ভবিষ্যতেও তা-ই থাকবেন। এই পরিস্থিতিতে আবারও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নীতীশ। তাঁর শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা প্রমুখ। নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী হলেও উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন বিজেপির সম্রাট চৌধরি এবং বিজয় সিংহ।
রাজ্যপালের কাছে সকালে গিয়েছিলেন ইস্তফা দিতে। বিকেলে সেই রাজ্যপালের কাছেই আবার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন নীতীশ কুমার। সকালে ইস্তফা দিয়ে ভেঙেছিলেন আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট। বিকেলে বিজেপির সমর্থনে আবার পটনার মসনদে নীতীশ। এ বারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা।
বিকেল ৫টায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে আবার শপথ নেবেন নীতীশ কুমার। উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বিজেপির সম্রাট চৌধরি এবং বিজয় সিংহ।
এক ঘণ্টাও হয়নি মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছেন নীতীশ কুমার। তার মধ্যেই রাজধানী পটনার রাস্তায় দেখা মিলতে শুরু করেছে মোদী-নীতীশের ছবি দেওয়া বড় বড় হোর্ডিংয়ের।
বিহারে বিজেপি পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন সম্রাট চৌধরি এবং উপ-নেতা বিজয় সিংহ। বিজেপি বিধায়করা সর্বসম্মতিক্রমে রাজ্যে বিজেপি-জেডিইউ জোট সরকার গঠনের প্রস্তাব পাস করেছেন। ফলে বিহারে আবার ক্ষমতা দখল করতে চলেছে এনডিএ।
নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছেন, এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই তাঁর বাসভবনে একে একে আসতে শুরু করেছেন বিজেপি বিধায়করা।
এই মুহূর্তে বিহার বিধানসভায় কে কোথায়?
আরজেডি— ৭৯ বিধায়ক
বিজেপি— ৭৮ বিধায়ক
জেডিইউ— ৪৫ বিধায়ক
কংগ্রেস— ১৯ বিধায়ক
সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন— ১২ বিধায়ক
হাম (সেকুলার)— ৪ বিধায়ক
সিপিআই— ২ বিধায়ক
সিপিএম— ২ বিধায়ক
মিম— ১ বিধায়ক
নির্দল— ১ বিধায়ক
এই মুহূর্তে বিহারে একক ভাবে সবচেয়ে বড় দল আরজেডি। তাদের ৭৯ জন বিধায়ক। যদিও তা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ১২২-এর চেয়ে ৪৩ কম।