সরোজিনী নায়ডু শিশু হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গি-আক্রান্তেরা। সোমবার প্রয়াগরাজে। ছবি পিটিআই।
একে করোনায় রক্ষে নেই ডেঙ্গি দোসর! উত্তরপ্রদেশের বহু জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ফিরোজ়াবাদ জেলায়। গত ১০ দিনে ওই জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে ৪০ জন শিশু। হাসপাতালগুলিতে শয্যার আকাল, ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
ডেঙ্গি আক্রান্ত সন্তানকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য চিকিৎসকের পা ধরছেন মা। ফিরোজ়াবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সামনে গত কাল বছর বারোর একটি ছেলেকে নিয়ে বসে রয়েছেন তার পরিজনেরা। একটি মেয়ের কোলে মাথা রেখে ডেঙ্গি আক্রান্ত ওই ছেলেটি মাটিতে শুয়ে রয়েছে। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরে হাসপাতালের ভিতরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এক চিকিৎসক পরীক্ষা করেন ওই ডেঙ্গি আক্রান্তকে। সেই সময় মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল সঙ্গীতা আনেজার পা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আক্রান্তের মা। আর্জি, ‘ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করে নিন’। প্রিন্সিপালের নির্দেশের পরে ওই নাবালককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ছবি থেকে স্পষ্ট বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের সরকারি হাসপাতালগুলির অবস্থা কতটা করুণ। জেলায় ডেঙ্গি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে হাসপাতালগুলিতে জায়গা হচ্ছে না। প্রকারান্তরে সে কথা মেনে নিয়েছেন সঙ্গীতা। তিনি বলেন, ‘‘এই হাসপাতালে ৫৪০ জন শিশু ভর্তি। সকলেই তো নিজের আক্রান্ত পরিজনকে ভর্তি করতে চাইছেন… তাঁরা বলছেন, ‘একটা বেডে দু’জন করে রাখুন’। প্রাণহানি রোখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’’
ফিরোজ়াবাদে যে প্রবল ভাবে ডেঙ্গি ছড়িয়েছে তা মেনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। ডেঙ্গি মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে রাজ্যকে পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দীনেশকুমার প্রেমি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ৭৫৫টি দল গঠন করা হয়েছে। রবিবার ৬৪টি বিশেষ শিবির করা হয়েছিল। চার হাজারের বেশি মানুষ পরীক্ষা করিয়েছেন। অনেকেরই ডেঙ্গি ধরা পড়েছে।’’ ডেঙ্গি রুখতে মশার লার্ভা নির্মূলের লক্ষ্যে জেলা জুড়ে ২৫ হাজার গাপ্পি মাছ ছাড়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশে মথুরা ও আগরায়ও ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়ছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে নিশানা করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের অভিযোগ, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল নেই। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি ও ভাইরাল জ্বরে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সময় মতো উপযুক্ত চিকিৎসা না-পেয়ে শিশুরা মারা যাচ্ছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলে চলেছেন ‘সব ঠিক আছে’।’’ অখিলেশের দাবি, শুধু রাজ্যের পশ্চিমাংশ নয়, পূর্ব উত্তরপ্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গি।’’