বাড়ছে নোটের ক্ষত: মনমোহন

ছোট-মাঝারি শিল্পের এই সঙ্কট এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফসি) নগদের সমস্যার জন্য নোট বাতিলের সিদ্ধান্তই দায়ী কিনা, আজ নোট বাতিলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনে সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন মনমোহন সিংহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৩
Share:

ছোট ও মাঝারি শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের যাতে ঋণ পেতে সমস্যা না হয়, তার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপরে প্রবল চাপ তৈরি করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির নগদের সমস্যা মেটানো নিয়েও অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বন্দ্ব তুঙ্গে।

Advertisement

ছোট-মাঝারি শিল্পের এই সঙ্কট এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফসি) নগদের সমস্যার জন্য নোট বাতিলের সিদ্ধান্তই দায়ী কিনা, আজ নোট বাতিলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিনে সেই প্রশ্ন তুলে দিলেন মনমোহন সিংহ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীরা এখনও ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ধাক্কা লেগেছে কর্মসংস্থানেও। নোট নগদের সঙ্কট এখন পরিকাঠামোয় ঋণদাতা সংস্থা, এনবিএফসিগুলিকে ভোগাচ্ছে।’’ তাঁর মতে, যত দিন যাচ্ছে, নোট বাতিলের ক্ষত তত বাড়ছে। এবং অর্থনীতিতে আরও বিপর্যয় আসতে চলেছে।

এই আক্রমণের মুখে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে যুক্তি হাতড়াতে হয়েছে। বাতিল নোটের ৯৯.৩ শতাংশই ব্যাঙ্কে ফেরত চলে আসায় নোটবন্দির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। জেটলি আজ বলেন, ‘‘বাতিল নোট আটক করা নোট বাতিলের উদ্দেশ্য ছিল না। সব নোট ব্যাঙ্কে জমা পড়ে গিয়েছে বলে না জেনে-বুঝে সমালোচনা করা হয়।’’

Advertisement

অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, নোট বাতিলের ফলে করদাতার সংখ্যা বেড়েছে। সরকারের ঘরে আরও রাজস্ব এসেছে। সেই বাড়তি আয়ে মোদী সরকার কত কাজ করেছে, তা প্রমাণ করতে গিয়ে গ্রামের শৌচালয়, গরিব মানুষের জন্য বাড়ি থেকে চাষির জন্য ফসলের দাম বাড়ানো পর্যন্ত চলে গিয়েছেন তিনি।

কিন্তু নোট বাতিল করে নরেন্দ্র মোদী প্রধান যে তিনটি উদ্দেশ্য ঘোষণা করেছিলেন, তা হল, কালো টাকা নিকেশ করা, জাল নোট দূর করা এবং দুর্নীতি মুছে দেওয়া। এই তিনটি উদ্দেশ্য কতখানি সফল হয়েছে, তার কোনও পরিসংখ্যান দেননি জেটলি। শুধু বলেছেন, ‘‘নোট বাতিলের পরে ব্যাঙ্কে জমা টাকা থেকে ১৭.৪২ লক্ষ সন্দেহজনক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদের জবাব মিলেছে। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’’ কত জন দোষী, কত জন কালো টাকার মালিক শাস্তি পেয়েছেন, তা নিয়ে বিশদে যাননি জেটলি।

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী জেটলিকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর পর্বতপ্রমাণ ভুলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে আমাদের অপদার্থ অর্থমন্ত্রী-সহ সরকারের স্পিন-ডাক্তারদের নোট বাতিলের পক্ষে দাঁড়ানোর কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে।’’

নোট বাতিলের পরেই মনমোহন ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, এর ফলে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমবে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। ২০১৫-’১৬-তে বৃদ্ধির হার ছিল ৮.০১ শতাংশ। ২০১৬-র নভেম্বরে নোট বাতিলের পরে ২০১৬-’১৭-তে তা নেমে আসে ৭.১১ শতাংশে। ২০১৭-’১৮-তে বৃদ্ধির হার আরও কমে ৬.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। রাহুল মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘নোট বাতিলের ফলে ১ শতাংশের বেশি জিডিপি কমেছে। ১৫ লক্ষ চাকরিও খোয়া গিয়েছে।’’ আজ মনমোহন ফের সতর্কবার্তা দিয়েছেন, ‘‘এখনও নোট বাতিলের পুরো ধাক্কা বোঝা যায়নি। টাকার দর পড়ছে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। অর্থনীতিতে এর পরে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করবে।’’
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে প্রধানমন্ত্রী তার নতুন উদ্দেশ্য ঘোষণা করে বলেছিলেন, নগদের ব্যবহার কমানো, ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোও নোট বাতিলের উদ্দেশ্য। আজ জেটলি দাবি করেছেন, ইউপিআই, রুপে কার্ড, ভীম অ্যাপ-এর মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সংগঠন কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স-এর সেক্রেটারি জেনারেল প্রবীণ খাণ্ডেলওয়ালের মতে, ‘‘নোট বাতিলের ফলে বাজারে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। নগদ থেকে ডিজিটাল লেনদেনে যাওয়ার পথেও তেমন সাফল্য মেলেনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement