সিরাজুদ্দিন হক্কানি ফাইল চিত্র।
আফগানিস্তানে নতুন সরকার ঘোষণা হওয়ার পর স্পষ্ট হয়েছে, আগামী দিনে সে দেশের সব চেয়ে শক্তিশালী অংশ হয়ে উঠতে চলেছে হক্কানি নেটওয়ার্ক। পাকিস্তান এবং তাদের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর সরাসরি মদতে পুষ্ট এই সংগঠন থেকে চার জনকে নেওয়া হয়েছে তালিবান মন্ত্রিসভায়।
সিরাজুদ্দিন হক্কানি সরকারের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। নেটওয়ার্কের সব চেয়ে বড় নেতাও তিনি। তার বাবা জালালুদ্দিন হক্কানি তৈরি করেন এই সংগঠন, যারা প্রথমে সিআইএ-র বন্ধু হিসাবে সোভিয়েতের সঙ্গে লড়ে। পরে আমেরিকার সঙ্গেই যুদ্ধ করে। সে সময় থেকেই উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তান তাদের নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিতে শুরু করে। সিরাজুদ্দিনের কাকা খলিল-উর-রেহমান হক্কানি উদ্বাস্তুমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বর্তমান তালিবান মন্ত্রিসভায়। ২০১১ সাল থেকে তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকায়। এ ছাড়া সম্প্রচার মন্ত্রী হয়েছেন নাজবুল্লা হক্কানি, যিনি ২০০১ সাল থেকে তালিকাভুক্ত জঙ্গি। উচ্চশিক্ষামন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে শেখ আবিদুল বাকি হক্কানিকে, যাঁর বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তলিবান আফগানিস্তান দখল করার কয়েক সপ্তাহ আগে, অর্থাৎ চলতি বছরের মে মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জ তালিবান সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পেশ করে। সেখানে হক্কানি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বলা হয়, ‘তালিবানের সব চেয়ে কার্যকরী যোদ্ধাবাহিনী হক্কানি নেটওয়ার্ক। তারা হামলায় দক্ষ এবং মিশ্র আক্রমণে পারদর্শী। সেই টেকনিক্যাল দক্ষতাও তাদের রয়েছে।...তালিবান এবং আল কায়দার প্রধান সেতু এই হক্কানি নেটওয়ার্ক।’
২০০১ সালে তলিবানের পতনের পর হক্কানিরা পালিয়ে যায় উত্তর ওয়াজিরস্তানের মিরামশাহ প্রদেশে। পাকিস্তানের দেওয়া নিরাপত্তায় সেখানেই ঘাঁটি বানিয়ে থাকে তারা। তৈরি করে এক সমান্তরাল প্রশাসন। সেখানকার মানুষের কাছ থেকে কর আদায়, নির্মান সংস্থাগুলির থেকে টাকা তোলা, রাস্তাঘাটের কাজ হলে সেখানে জুলুম করার মতো কাজ করে যায় মসৃণ ভাবেই। আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে চোরাচালানের কাজেও ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে হক্কানি গোষ্ঠীকে। তালিবান ২০০৩ সালে আবার যখন নিজেদের নতুন করে সংগঠিত করার চেষ্টা শুরু করে, সিরাজুদ্দিনের নেতৃত্বে হক্কানি নেটওয়ার্ককে কেন্দ্রীয় আসনে বসতে দেখা যায়। হক্কানি নেটওয়ার্ককে নির্মূল করার জন্য সচেষ্ট হতে আমেরিকা বার বার পাকিস্তানকে চাপ দেয়। কিন্তু তাতে আমেরিকার চোখে ধুলো দেওয়া ছাড়া আর কিছু করেনি ইসলামাবাদ। বরং নিজেদের স্বার্থে হক্কানিকে আরও শক্তিশালীই করে গিয়েছে। এর ফল আজ দেখা যাচ্ছে।
ভারতীয় দূতাবাসে ২০০৮ সালের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আলাদা আলাদা করে হক্কানি নেটওয়ার্ককেই দায়ী করেছিল আমেরিকা এবং আফগানিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা। ২০০৯ থেকে ২০১২, টানা তিন বছর আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় কর্মীদের উপর বিচ্ছিন্ন ভাবে হামলা হয়। তার পিছনেও ছিল হক্কানিরা। আইএসআই-এর সঙ্গে তাদের দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক। অদূর ভবিষ্যতে তারাই পাকিস্তানের অন্যতম ভারত-বিরোধী অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা এখন নয়াদিল্লির।