Delhi Violence

১০-১৫ হাজারে মাস্কেট পাবেন, বলেই দিল যুবক

রাস্তার পাশে বছর বিশের যুবক গত সোম-মঙ্গলবারের বর্ণনা দিতে দিতে বলছিলেন, ‘‘দু’দিক থেকেই গুলি ছুটছিল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০ ০৪:০৭
Share:

দিল্লির সংঘর্ষে এ ভাবেই অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। —ফাইল চিত্র

‘‘হাজার পনেরোর মধ্যে তেজি ঘোড়া পেয়ে যাবেন। আপনার লাগবে নাকি!’’

Advertisement

অবাক হয়ে তাকানোয় কারওয়াল নগরের বছর বিশের যুবক চোখ টিপে বলেন, “দেশি কাট্টা তো হাজার দেড়েকেই মেলে”।

‘‘কোথা থেকে ঢোকে এই সব?’’

Advertisement

‘‘আপনি যে রাস্তায় ঢুকলেন। লোনি থেকে।’’

হিংসা-বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্ব দিল্লির গায়েই উত্তরপ্রদেশের লোনি। লোনি বর্ডার পুলিশ স্টেশনের পাশের রাস্তা দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে ঢুকলে জোহরিপুর। নোংরা জল, আবর্জনা জমে থাকা নালা পার হলেই কারওয়াল নগর। রাস্তার পাশে বছর বিশের যুবক গত সোম-মঙ্গলবারের বর্ণনা দিতে দিতে বলছিলেন, ‘‘দু’দিক থেকেই গুলি ছুটছিল। দেশি ‘কাট্টা’ বা ওয়ানশটার, পাইপগান, মাস্কেট-এর মতো ‘তেজি ঘোড়া’, সেমি-অটোমেটিক পিস্তল—কিছুই সে দিন বাদ যায়নি।’’

এত বন্দুক এল কোথা থেকে? “চাইলেই মেলে। হাজার দেড়েক টাকায় দেশি কাট্টা বা ওয়ানশটার পেয়ে যাবেন। ১০-১৫ হাজারে আপনাকে মাস্কেট এনে দেবে।” যুবকের সপ্রতিভ উত্তর। দিল্লির হিংসায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। দিল্লি পুলিশের কনস্টেবল রতন লাল থেকে সীলমপুরের ১৮ বছরের আমন, মুস্তাফাবাদের মহম্মদ মুদাসসর-ই হোন বা কারওয়াল নগরের ২৬ বছর বয়সী রাহুল সোলাঙ্কি—মৃত্যুর কারণ গুলি। কোনওটাই পুলিশের গুলি নয়। শুধু বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের তদন্তেই ২৩টি এফআইআর হয়েছে।

রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া হিংসা বুধবার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পরে উত্তরপ্রদেশের লোনি থেকে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে ঢোকার রাস্তা ‘সিল’ করে দিয়েছে পুলিশ। রাস্তায় গাড়ি ঢোকাও মানা। ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মোতায়েন। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, সংঘর্ষ শুরুর আগে এই লোনি থেকেই ম্যাটাডর ভরে ভরে বাইরের দুষ্কৃতীরা দিল্লিতে ঢুকেছে। সেই সঙ্গে ঢুকেছে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। কাছাকাছির মধ্যে হরিয়ানার বাগপত, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকেও লোক নিয়ে আসা হয়েছিল বলে স্থানীয়দের বক্তব্য।

আর আগ্নেয়াস্ত্র? জোহরিপুরের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, “দিল্লির বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই এলাকায় বন্দুক-পাইপগান ঢুকতে শুরু করেছিল। পুলিশ কয়েক বার হানা দিয়েছে। অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ধরাও পড়েছে শুনেছি। ভেবেছিলাম, বিধানসভা ভোটের সময় অশান্তি হবে, তার আয়োজন চলছে। কিন্তু ভোট নির্বিঘ্নে কেটে যাওয়ার পরে যে অশান্তি শুরু হবে, ভাবিনি।’’

এত বেআইনি বন্দুক তৈরি হচ্ছে কোথায়? পুলিশের এক কর্তার জবাব, “এ শিল্পের একটাই আঁতুড়ঘর। বিহারের মুঙ্গের। মধ্যপ্রদেশের বারওয়ানি থেকেও আসে। ওই সব জায়গা থেকে কাঁচামাল এনেও দিল্লির আশেপাশে লোনি, বাঘপতের কারখানায় বন্দুক তৈরি হচ্ছে। এইরকম সংঘর্ষ তো রোজ হচ্ছে না। কিন্তু ছিনতাইকারী, মাফিয়া, ডাকাতদের কাছে এ সবের চাহিদা থাকেই”।

দিল্লির সংঘর্ষের ঘটনায় দু’টি বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করা হয়েছে। পুলিশের আশ্বাস, এত বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র কী ভাবে ঢুকল, তারও তদন্ত হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির জোহরিপুর বা মুস্তাফাবাদে আর বেআইনি বন্দুক মিলবে না, এমন নিশ্চয়তা পুলিশও দিতে নারাজ। দিল্লির এক পুলিশ কর্তার জবাব, “এ দিকে উত্তরপ্রদেশ, ও দিকে হরিয়ানা, দুই রাজ্যের সীমানা, তার মধ্যে এমন ঘিঞ্জি এলাকা! তেজি ঘোড়া আর কাট্টা-র ব্যবসায়ীরা নিজেদের কারবার চালিয়ে যাবেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement