সোমবার ইসলামাবাদে সরতাজ আজিজ। ছবি: এএফপি।
সরতাজ আজিজ যা বলেছেন, তা তাঁর দেশের অভ্যন্তরীণ চাপেই— মনে করছে নয়াদিল্লি। তাই পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার নেতিবাচক কথার থেকেও তারা বেশি করে ভরসা রাখছে উফায় নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফের বৈঠকের পরে জারি যৌথ বিবৃতির উপরে। সেখানে কাশ্মীর, বালুচিস্তান বা সমঝোতা এক্সপ্রেসের প্রসঙ্গ নেই। সেই বিবৃতিতে সই করেছে পাকিস্তান। তাই, কূটনৈতিক শিবিরও মনে করছে, বল এখন ইসলামাবাদের কোর্টে।
দীর্ঘ বিদেশ সফর শেষ করে আজ ভোরবেলা দিল্লিতে পৌঁছেছেন মোদী। গত কাল সরতাজ-বোমার ফলে যে সার্বিক নেতিবাচক হাওয়া তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে সক্রিয় হয়েছেন তিনি। দিল্লি মনে করছে, যৌথ বিবৃতিতে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের পাশাপাশি পাক বিদেশসচিবের সিলমোহর রয়েছে। ফলে সেটাই দু’দেশের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশিকা। যা কিনা পাকিস্তান সরকারের একটি নথিও বটে।
ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা যে দু’দেশকেই মেনে চলতে হয়। সাউথ ব্লকের বক্তব্য, সেই চাপ সামলাতেই কাশ্মীর, বালুচিস্তান বা সমঝোতা এক্সপ্রেসের প্রসঙ্গ তুলেছেন সরতাজ। ঠিক যেমন এ দিন স্বরাষ্টমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেছেন, সীমান্তে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করলে পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেবে ভারতীয় সেনা। রাজনাথের ব্যাখ্যা, মোদীজি হাতজো়ড় করেনি। শুধু দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছেন। ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, রাজনাথের এই কথাও দু’দেশের আলোচনায় বাধা নয়।
বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, সরতাজ যা করেছেন তাকে ‘মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ’ বলা যেতে পারে। অর্থাৎ, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাবেকি অবস্থানের সঙ্গে উফা বৈঠকের কিছু অংশ মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ, কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের অস্বস্তির কথা না রেখে সন্ত্রাস দমন এবং মুম্বই বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের মামলার নিষ্পত্তির কথা বলা এই বিবৃতিকে সহজে মেনে নেবে না পাকিস্তানের সেনা, আইএসআই এবং মোল্লাতন্ত্র। তাই বিবৃতিটি নওয়াজ শরিফের সদিচ্ছাকে প্রতিফলিত করলেও সে দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রগুলি একে সহজে মেনে নেবে না। তাই সরতাজের রূঢ়ভাষণ দিল্লিকে অবাক করেনি। বরং বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যৌথ বিবৃতিকে নস্যাৎ করে কোনও সরকারি বার্তা ইসলামাবাদের কাছ থেকে নয়াদিল্লির কাছে আসেনি। সাউথ ব্লক তাই ‘যত দ্রুত সম্ভব’ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের আলোচনা শুরু করতে চায়।
সরতাজের পাল্টা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও যৌথ বিবৃতি নিয়ে নয়াদিল্লির ব্যাখ্যা, সেখানে সমস্ত বকেয়া বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। আর সেই তালিকায় কাশ্মীরও পড়ে। ফলে আলাদা করে কাশ্মীর প্রসঙ্গ রাখার প্রয়োজন হয়নি। উফায় অন্য সব বিষয়ের সঙ্গে উঠেছিল ভারতে অন্যতম ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জাকিউর রহমান লকভির প্রসঙ্গও। মোদী শরিফকে বলেছেন, লকভিকে ছে়ড়ে দেওয়ার বিষয়টি ভারতের সাধারণ মানুষের আবেগের সঙ্গে যুক্ত। লকভিকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হলে পাকিস্তান সম্পর্কে ভারতের জনমত অনেকটাই পাল্টে যাবে। পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, দু’দেশের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান, পর্যটন— সব ক্ষেত্রেই এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।
সাউথ ব্লকের বক্তব্য, নওয়াজ শরিফ নিজে রাজনীতিবিদ। পারভেজ মুশারফের মতো ফৌজি নন। ফলে জনমত গুরুত্ব তিনি বুঝতে পারবেন—এমনটাই আশা করছে নয়াদিল্লি।