ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। ফাইল চিত্র।
অভিযোগ, শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক ভাবে চলছে কি না দেখতে জামার ভিতর দিয়ে অবলীলায় বুকে-পিঠে হাত দিয়েছেন। আর এক জনের অভিযোগ, প্রোটিনযুক্ত খাবার পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছেন। আর এক মহিলা কুস্তিগিরের অভিযোগ, মোবাইলে বাড়িতে কথা বলানোর সুযোগ দিয়ে ঘরে ডেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে এ ধরনের যৌন হেনস্থার অন্তত ১৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও সংবাদমাধ্যমে দিল্লি পুলিশ দু’দিন আগে দাবি করে, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের স্বপক্ষে কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ জোটাতে ব্যর্থ তারা।
দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তা বিজেপির ওই সাংসদ। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে তলায় তলায় মহিলা কুস্তিগিরদের ক্ষোভ থাকলেও, এ বছরের গোড়ায় প্রথম তা প্রকাশ্যে আসে। আন্তর্জাতিক পদকপ্রাপ্ত কুস্তিগিরেরা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে পথে নেমে আন্দোলনে বসায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পায়। তদন্তভার যায় দিল্লি পুলিশের কাছে। সূত্রের মতে, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অন্তত ছ’জন কুস্তিগির অন্তত পনেরোটি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ জানিয়েছেন। যেগুলি তদন্ত করে দেখছে দিল্লি পুলিশ। দু’সপ্তাহের মধ্যে চার্জশিট বা চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করতে চলেছে তারা।
পুলিশের কাছে যে অভিযোগ জমা পড়েছে তাতে একজন কুস্তিগির অভিযোগ করেছেন, ছবি তোলার অছিলায় ওই মহিলা কুস্তিগিরকে জোর করে কাছে টেনে নেন ব্রিজভূষণ। তারপর ইচ্ছে করে তাঁর বুকে হাত ঘষে দেন। যদিও ওই কুস্তিগির অনেক আগেই ব্রিজভূষণকে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি তাঁর সঙ্গে কোনও ধরনের শারীরিক সম্পর্কে যেতে রাজি নন। ওই মহিলা কুস্তিগিরের অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি যে হোটেলে খেতে গিয়েছিলেন, সেখানে ব্রিজভূষণও যান। সেখানে ব্রিজভূষণ তাঁকে ডেকে নিয়ে পাশে বসিয়ে কথা বলতে বলতে তাঁর জামার ভিতর হাত ঢুকিয়ে দেন। পরে কুস্তি ফেডারেশনের দফতরে ব্রিজভূষণ ওই কুস্তিগিরের পাশে বসে বিনা অনুমতিতে তাঁর পায়ের বিভিন্ন অংশে হাত দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর এক কুস্তিগিরের অভিযোগ, তিনি যখন মাটিতে শুয়ে কসরৎ করছিলেন, ব্রিজভূষণ তাঁর জামার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বুক থেকে পেটে হাত বোলান। ব্রিজভূষণের যুক্তি ছিল, প্রশিক্ষণের সময়ে ওই কুস্তিগিরের শ্বাসপ্রশ্বাস কেমন চলছে তা দেখতেই ওই ‘পরীক্ষা’ করেন। এ ছাড়া, কাউকে মোবাইল ফোনে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার অছিলায়, কাউকে বিনামূল্যে প্রোটিন পাউডার পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে একাধিক মহিলা কুস্তিগিরের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন বলে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
অভিযোগ, ব্রিজভূষণের নজর থেকে ছাড় পায়নি নাবালিকারাও। অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করায় তাঁর বিরুদ্ধে পকসো আইনে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও দিল্লি পুলিশের দাবি, তাঁরা এখনও ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কোনও পাকা প্রমাণ জোগাড় করে উঠতে ব্যর্থ। তার জোরেই কি অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ ফি দিন বুক ঠুকে দাবি করছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ প্রমাণ হলে ফাঁসিতে যেতে রাজি আছি আমি।’’