দক্ষিণ দিল্লি পুরসভা। ফাইল চিত্র।
প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তৈরি হওয়া শৈত্যের আবহে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে নতুন করে কোমর বেঁধে নামছে সরকার। দিল্লি এবং মুম্বইয়ের মতো শহরগুলিতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা পরিচয় গোপন করে থাকছে বলে গত কয়েক মাস ধরেই সরব বিজেপি নেতৃত্ব। এ বারে দিল্লির সরকারি স্কুলগুলিতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সন্তানদের শনাক্ত করার নির্দেশ দিল দিল্লি পুর নিগম। পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারীদের যাতে জন্মের শংসাপত্র না দেওয়া হয়, সেই নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে।
দিল্লি পুরসভার নিয়ন্ত্রণ অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টির হাতে থাকলেও দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, গত ১২ ডিসেম্বর এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি স্কুলগুলিকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি এ নিয়ে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে সাপ্তাহিক রিপোর্টও দিতে বলা হয়েছে স্কুলগুলিকে।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অবিলম্বে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করতে হবে। দরকারে সব পড়ুয়ার পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখতে হবে। সন্দেহভাজন পড়ুয়াদের তথ্য সাপ্তাহিক ভিত্তিতে জমা দিতে হবে প্রশাসনকে। তার ভিত্তিতে প্রশাসন ওই পড়ুয়ার অভিভাবক-সহ পরিবার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে।
দিন কয়েক আগেই দিল্লির শাসক আম আদমি পার্টিকে নিশানা করে বিজেপি অভিযোগ করেছিল, আপ দিল্লিতে ভোটে জেতার স্বার্থে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গাদের থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে। সে সময় আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল সরাসরি বিজেপিকে তোপ দেগে বলেছিলেন, বিজেপি যাঁদের অনুপ্রবেশকারী বলছে, তাঁরা আসলে পূর্বাঞ্চলীয়। মূলত পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, অসমের মতো রাজ্যগুলি থেকে বহু লোক সোনে কাজের সূত্রে যান। এঁদের ভোট পায় না বলেই বিজেপি এঁদের দিল্লি থেকে তাড়াতে মরিয়া। পাশাপাশি দিল্লি বিধানসভা ভোটে জেতার লক্ষ্যে ধর্ম এবং ভাষার ভিত্তিতে বহু ভোটারের নাম ইচ্ছাকৃত ভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে বলেও সে সময় অভিযোগ করেছিল আপ।
ঘটনাচক্রে চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের নতুন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। দেবেন্দ্র বিধানসভায় জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে আটক রাখার জন্য মুম্বইয়ে বড় মাপের ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করবে নতুন সরকার। সূত্রের দাবি, এর আগে এই ধরনের ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করে সেখানে বহু লোককে আটকে রেখে মানবাধিকার ভঙ্গের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে অসমে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। এ বার মহারাষ্ট্রেও বিজেপি সেই রকম পদক্ষেপই করতে চলেছে বলে অভিযোগ।
দিল্লি, মহারাষ্ট্রের মতো এলাকায় এর আগেও বাংলাদেশি সন্দেহে এ রাজ্যের বাঙালিদের উপরে নানা হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। দিন কয়েক আগেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে আটক করেছে গাজ়িয়াবাদ পুলিশ। তাঁর পরিবারের দাবি, তাঁরা অন্তত পঞ্চাশ বছর ধরে মালদহের বাসিন্দা। সেই সংক্রান্ত কাগজপত্রও রয়েছে। তার পরেও বাংলাভাষী বলেই এই হেনস্থা। গত এক দশকে বাংলাদেশি সন্দেহে বাঙালিদের হেনস্থার অভিযোগ একাধিক বার উঠেছে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে। দিল্লি এবং মুম্বইয়ে সরকারি স্তরে নেওয়া সিদ্ধান্তে এ রাজ্য থেকে সেখানে কাজ করতে যাওয়া বহু বাঙালি হেনস্থার শিকার হবেন বলেই অভিযোগ বিরোধী দলগুলির।