ভারতের বড় শহরগুলিতে তৈরি হচ্ছে ক্ষেপনাস্ত্র রোধী প্রযুক্তি।
চিনের রক্তচক্ষু রয়েছে। সঙ্গে ‘চিরশত্রু’ পাকিস্তান তো আছেই। এবার তাই দেশের মহানগরগুলির আকাশসীমা অভেদ্য করতে একটি বিরাট পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত। দেশীয় প্রযুক্তির অগ্নি ও ব্রাহ্মসের সঙ্গে মার্কিন-রুশ ক্ষেপণাস্ত্র কিনে এবার দেশের মহানগরগুলির আকাশসীমা অভেদ্য করতে ঢেলে সাজছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনীর এক পদস্থ কর্তার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজধানী দিল্লির সঙ্গেই মুম্বই, কলকাতার মতো মহানগর ও বড় শহরকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার পাল্লার মধ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে, যাতে হামলা হলে সুরক্ষিত থাকে এই সব শহর। শুধু তাই নয়, আগে থেকে হামলার ইঙ্গিতও মিলবে এই প্রযুক্তিতে।
‘‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলির সামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিবেচনা করে রাজধানী-সহ সব বড় শহরেই আকাশসীমার নিরাপত্তা জোরদার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র-সহ অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র যোগ হচ্ছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়।’’ জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর এক পদস্থ কর্তা।
গত কয়েক বছরে চিন আকাশসীমার নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়িয়ে ফেলেছে। নয়াদিল্লিও সেই বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। গোয়েন্দারাও সেই ক্ষমতার পরিমাপ এবং খুঁটিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। এরপর দেশের আকাশসীমার নিরাপত্তা বেজিংয়ের সমগোত্রীয় করতে কিংবা তার চেয়েও শক্তিশালী করতে সেনার হাতে আরও অস্ত্রভাণ্ডার যোগ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, জানিয়েছে সেনার ওই সূত্র।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে নাভিশ্বাস! ১০ দিনের ‘পলিউশন ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা, বন্ধ নির্মাণ, গণ পরিবহণে জোর
সামরিক অস্ত্রভাণ্ডার মজবুত করতে আমেরিকার সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন কেনার কথাবার্তা চলছে। জলপথের নিরাপত্তা বাড়াতে ইতিমধ্যেই ২২টি ‘সি গার্ডিয়ান’ ভারতকে বিক্রির প্রস্তাবে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে ওয়াশিংটন। নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটোর সদস্যভূক্ত নয়, এমন কোনও দেশের কাছে এই প্রথম এই প্রযুক্তি বিক্রি করছে আমেরিকা।
আরও পড়ুন: কবে থেকে জাতীয় ছুটি গাঁধী জয়ন্তী, কবে থেকে তিনি ‘জাতির জনক’? জানেই না কেন্দ্র
সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে এস-ফোর ট্রায়াম্ফ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনার চুক্তি হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যেই এই প্রযুক্তি ভারতীয় সেনার হাতে চলে আসবে। এর পাশাপাশি মার্কিন ন্যাশনাল অ্যাডভান্সড (ভূমি থেকে আকাশ) ক্ষেপণাস্ত্র (সিস্টেম টু) কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে। সেনার ওই পদস্থ কর্তার মন্তব্য, আকাশসীমা অপ্রতিরোধ্য করে তুলতেই গোটা এই প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুন: জলের ট্যাঙ্কারের সঙ্গে ধাক্কা, অল্পের জন্য রক্ষা বিমানের
আকাশসীমা সুরক্ষিত করতে ইতিমধ্যেই সেনার হাতে রয়েছে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অগ্নি সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র। অগ্নি ফোর সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লার মধ্যে এসে গিয়েছে চিনের সব শহর। শুরু হয়েছে অগ্নি পাঁচ নিয়ে গবেষণাও। তার সঙ্গে গত বছরেই নভেম্বরেই রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ প্রযুক্তিতে ভারতে তৈরি হয়েছে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এই ব্রাহ্মস। এই সবগুলিই আকাশসীমা সুরক্ষিত করতে যোগ হবে প্রতিরক্ষায়।
আরও পড়ুন: ছ’মাস পরিচারিকা সেজে খুনের কিনারা! ‘দেশি শার্লক’ রজনীর ঝুলিতে ৮০ হাজার সমাধান
অর্থাৎ, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এমন ভাবে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে দেশের সব বড় শহর এবং বিশেষ করে মহানগরগুলি আকাশসীমা হয়ে ওঠে দুর্ভেদ্য দুর্গের মতো, বলছেন ওই সেনাকর্তা। কখনও কোনও শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হানা হলেও যাতে তা আছড়ে পড়ার আগেই রুখে দেওয়া বা নিস্ক্রিয় করে দেওয়া যায়, সেরকমই সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির দিকে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।