কাজটা নিঃসন্দেহে কঠিন। কিন্তু আসন্ন চিন সফরে এই কঠিন কাজটিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিশ্বের পরমাণু ক্লাবে (পরমাণু সরবরাহকারী সংস্থা বা এনএসজি) পা রাখতে চিনা সমর্থন আদায় করতে চান তিনি। মোদীর আসন্ন সফরে যে এই বিষয়ে বেজিংয়ের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হবে তা আজ স্পষ্টই জানিয়েছেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর।
তবে একই সঙ্গে গরম কূটনীতিও চালাতে চায় ভারত। তাই পাক-অধিকৃত কাশ্মীর দিয়ে চিনের ৪,৬০০ কোটি ডলারের আর্থিক করিডর নিয়ে আজ ফের কড়া বার্তা দিয়েছে দিল্লি।
এনএসজি-তে ভারতের পা রাখার চেষ্টায় প্রথম থেকেই বাগড়া দিয়ে এসেছে বেজিং। তাই প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিষয়টিকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক। সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, ১৭ এপ্রিল বেজিংয়ের সঙ্গে পরমাণু সম্প্রসারণ বিরোধিতা, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ এবং অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বৈঠক করেছে নয়াদিল্লি। তাতে ভারতের যুগ্মসচিব (নিরস্ত্রীকরণ) অমরদীপ সিংহ এবং চিন সরকারের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ডিজি ওয়াং কুন হাজির ছিলেন। অমরদীপ পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষায় ভারতের স্বেচ্ছারোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং পরমাণু সম্প্রসারণ রোধে নয়াদিল্লির ভূমিকার কথা বিশদ তুলে ধরেছেন। এ কথাও চিনকে তথ্য ও নথি-সহ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, পরমাণু শক্তি বাইরে রফতানি করার ক্ষেত্রে ভারত সর্বদাই এনএসজি-র নির্দেশিকা মেনে চলে।
এ ভাবেই প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে নিঃশব্দে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এই বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গেও অদৃশ্য প্রতিযোগিতার চাপ নয়াদিল্লির উপর রয়েছে। চিনের সঙ্গে পাকিস্তানের একটি বড় মাপের পরমাণু-অংশীদারি রয়েছে। সাউথ ব্লকের আশঙ্কা, চিন পাকিস্তানকে এনএসজিতে ঢোকাতে শীঘ্রই আসরে নামতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্রে খবর, আসন্ন বৈঠকে মোদী চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংকে জানাবেন, বিশ্বের পরমাণু সম্প্রসারণ রোখার স্বার্থেই ভারতকে এনএসজি-র সদস্য করা হোক। দু’দেশের মধ্যে অসামরিক পরমাণু সমঝোতা নিয়েও আলোচনা হবে। বিষয়টি নিয়ে যে দিল্লি উদ্যোগী হচ্ছে তা স্পষ্টই জানিয়েছেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। বিদেশসচিবের কথায়, ‘‘এনএসজিতে ঢুকতে চিন ও অন্য কয়েকটি দেশের সমর্থন প্রয়োজন। আগামী সফরে আলোচনা হবে।’’ দু’মাস আগে বেজিং জানিয়েছে, এই সদস্যপদ অর্জনের জন্য নয়াদিল্লিকে পরবর্তী পদক্ষেপগুলি করতে হবে।
অর্থাৎ চিনের মনোভাব এখনও কড়া। গরম কূটনীতির সুরও ছাড়ছে না ভারত। পাক-অধিকৃত কাশ্মীর হয়ে রাস্তা, রেলপথ ও পাইপলাইনের এক বিস্তীর্ণ করিডর তৈরি করতে চায় বেজিং। তার মাধ্যমে পশ্চিম চিনের সঙ্গে আরব সাগর যুক্ত হবে। এই প্রকল্প নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা আগেই জানিয়েছিল ভারত। আজ ফের দিল্লিতে নিযুক্ত চিনা দূতকে ডেকে কড়া ভাষায় জানানো হয়, কাশ্মীরের ওই অংশ নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বিবাদ রয়েছে। তাই ওই প্রকল্পে আপত্তি রয়েছে নয়াদিল্লির।
মোদী সরকারের কড়া বার্তার জবাব দিচ্ছে বেজিংও। চিনা সরকারি সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ‘‘দেশে মর্যাদা বাড়াতে ও চিনের সঙ্গে আলোচনায় নিজের হাতে বেশি তাস রাখতে সীমান্ত ও নিরাপত্তা নিয়ে খেলছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।’’ চিনা সংবাদমাধ্যমের মতে, দলাই লামাকে সমর্থন করা বা অরুণাচল প্রদেশেও যাওয়া উচিত নয় মোদীর।