কৃষকদের বিক্ষোভে অবরুদ্ধ পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা। ছবি: পিটিআই।
দিল্লি যাওয়ার পথে পুলিশের সঙ্গে কয়েক ঘন্টা সংঘর্ষের পরে ‘যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা করলেন কৃষকেরা। পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিলেন, ‘‘আগামীকাল আবার চেষ্টা করব।’’ বস্তুত, ২০২০-’২১-এর কৃষক আন্দোলনের ছবি দেখা গেল মঙ্গলবার।
নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখানোর সুযোগ করে দিতে হবে কৃষকদের। কেন্দ্রের পাশাপাশি পঞ্জাব এবং হরিয়ানাকে এই নির্দেশই দিল পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট
প্রথমে প্রতিবাদী কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযানে শামিল হয়নি তাঁর সংগঠন ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন। তবে সেই রাকেশ টিকায়েতই মঙ্গলবার দুপুরে জানালেন, তিনি প্রতিবাদী কৃষকদের পাশে রয়েছেন। সরকার সমস্যা তৈরি করলে তিনি যে প্রতিবাদী কৃষকদের পাশে দাঁড়াবেন, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাকেশ।
পঞ্জাব থেকে ব্যারিকেড ভেঙে হরিয়ানায় ঢোকার চেষ্টা কৃষকদের। পাথর ছোড়ারও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। ড্রোনের মাধ্যমে প্রতিবাদী কৃষকদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের সেল ছুড়ল পুলিশ। সিমেন্টের ব্যারিকেডের মাধ্যমে কৃষকদের আটকানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। প্রতিবাদী কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামানও ব্যবহার করা হচ্ছে।
কৃষকদের বিক্ষোভের আবহে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে দিল্লিকে। ইতিমধ্যেই বন্ধ করা হয়েছে লালকেল্লা এবং দিল্লির দু’টি মেট্রো স্টেশন। অন্তত আটটি স্টেশনের একাধিক দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিল্লির প্রতিটি গাড়িতেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
ফের সংবাদ শিরোনামে দিল্লির গাজিপুর, সিঙ্ঘু এবং টিকরি সীমানা। দিল্লিতে ঢোকার প্রায় সমস্ত প্রবেশপথকেই দুর্গের চেহারা দিয়েছে পুলিশ। অধিকাংশ গাড়িকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মঙ্গলবার সকাল থেকেই যানজট শুরু হয় দিল্লির গাজিপুর এবং চিল্লা সীমানায়। দিল্লি থেকে হরিয়ানার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়কেও যানজট শুরু হয়। পরিস্থিতি এমনই যে, এক কিমি রাস্তা পেরোতে এক ঘণ্টা সময় লাগছে।
পঞ্জাব এবং হরিয়ানার মধ্যবর্তী শম্ভু সীমানায় প্রতিবাদী কৃষকদের রুখতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ব্যবহার করল পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী। রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় পুলিশ এবং প্রতিবাদী কৃষকদের মধ্যে। এমনিতেই পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা এবং দিল্লিতে ঢোকার সমস্ত রকম প্রবেশপথে ব্যারিকেড, কাঁটা দেওয়া তার জড়িয়ে কার্যত দুর্গের চেহারা দেওয়া হয়েছে। যদিও কৃষক সংগঠনগুলি হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছে, তারা মাত্র আধ ঘণ্টার পরে সমস্ত ব্যারিকেড তুলে ফেলবে।
পঞ্জাবের ফতেগড় সাহিব থেকে শুরু হল প্রতিবাদী কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযান। মিছিলের অগ্রভাগেই রয়েছে কালো ত্রিপলে ঢাকা অজস্র ট্র্যাক্টর।
কৃষকদের দু’টি বড় সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চা এবং কিসান মজদুর মোর্চা গত ডিসেম্বরেই দাবি আদায়ে ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের ডাক দেয়। দু’টি সংগঠনের আওতায় মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের সাড়ে তিনশোটি ছোট-বড় কৃষক সংগঠন রয়েছে। তবে ২০২০ সালের আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা দুই কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েত এবং গুরনাম সিংহ চারুনি মঙ্গলবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেই। মঙ্গলবার প্রতিবাদী কৃষকদের নেতৃত্বে থাকতে পারেন দুই কৃষক নেতা সারওয়ান সিংহ পান্ধের এবং জগজিৎ সিংহ দাল্লেওয়াল।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে প্রতিবাদী কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযান। মিছিলে বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকেরা থাকলেও নেতৃত্বে থাকবেন পঞ্জাবের সাঙরুর কৃষকেরা। মিছিলে থাকবে প্রায় আড়াই হাজার ট্রাক্টর।
সোমবার রাত ১১টার পর বৈঠকে বসে ২০২০ সালের ইলেকট্রিসিটি আইন বাতিল করার বিষয়ে কৃষক নেতাদের আশ্বস্ত করেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরির ঘটনায় কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু কৃষকদের মূল তিনটি দাবি— ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য, কৃষিঋণ মকুব এবং স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাবের রূপায়ণ নিয়ে দু’পক্ষ কোনও স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। বৈঠকের পর বৈঠকে যোগ দেওয়া কৃষকদের এক প্রতিনিধির অভিযোগ, দু’বছর আগে কৃষকদের অর্ধেক দাবি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কেন্দ্র কিছুই করেনি। কৃষকেরা শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও সরকার সময় নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ তাঁর।
২০২০ সালে তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লি সীমান্তে অবস্থানে বসেছিলেন কৃষকেরা। পরে তিন আইনই বাতিল করা হয়। আর এই আন্দোলনে নামা কৃষকদের দাবি ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। একই সঙ্গে সমস্ত কৃষিঋণ মকুব করতে হবে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। ২০২০-২১ সালের প্রতিবাদে কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর কৃষকনেতা তথা ‘পঞ্জাব কিসান মজদুর সংঘর্ষ কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক সারওয়ান সিংহ পান্ধের জানান, তাঁর সংগঠন ‘দিল্লি চলো’ অভিযানে শামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখছে। তার পরই কেন্দ্রকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “আমাদের দাবি সরকার পূরণ করবে, এমনটা আমরা ভাবিনি। যদি সরকার আমাদের কিছু দিত, তা হলে আমরাও আমাদের আন্দোলনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতাম।”
শেষ মুহূর্তে প্রতিবাদী কৃষকদের বুঝিয়ে আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল কেন্দ্র। সোমবার মধ্যরাতে চণ্ডীগড়ে কৃষকদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা এবং কেন্দ্রীয় ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকের শেষেও কোনও রফাসূত্র মেলেনি।