ওয়েনাড়ে ধ্বংসস্তূপের মাঝে উদ্ধারকাজ চলছে। ছবি: রয়টার্স।
কেরলের ওয়েনাড়ে ভূমিধসকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেল। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৩০৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের সম্পূর্ণ দেহ উদ্ধার করা যায়নি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে মিলেছে দেহাংশ মাত্র। ভূমিধসের পর থেকে গত চার দিনে ওয়েনাড় যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে মৃতদেহের সন্ধান চলছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একাধিক কুকুরকেও এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ শুক্রবার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ওয়েনাড়ে মৃতের সংখ্যা ৩০৮। তার মধ্যে ১৯৫টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১১৩টি দেহাংশ পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। সেগুলিরও ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। যদিও সরকারি খাতায় এখনও পর্যন্ত ১৯০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১৯০, নিখোঁজ ২০০-র বেশি মানুষ।
বৃহস্পতিবার সারা দিন চালিয়ার নদীর জলে ভেসে এসেছে একের পর এক দেহাংশ। সেগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। চূড়ালমালা, আত্তামালা, নুলপুঝা এবং মুন্ডাক্কাই গ্রাম দুর্যোগের পর নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে ধ্বংসস্তূপ। কাদামাটিতে এখনও বহু দেহ আটকে আছে বলে আশঙ্কা। মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে দেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। মাটি সরতেই বেরিয়ে আসছে দেহ কিংবা দেহাংশ। জিপিএস ব্যবহার করে ড্রোনের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করছেন উদ্ধারকারীরা। যেখানে উদ্ধারকাজ প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে, সেখানে পৌঁছনোর চেষ্টা শুরু হচ্ছে। ত্রাণ এবং উদ্ধারের কাজে গতি আনতে ওয়েনাড়ে ১৯০ ফুট দীর্ঘ বেলি ব্রিজ তৈরি করেছে ভারতীয় সেনা। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই সেতু তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এত দিন বিপর্যস্ত এলাকায় ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছিল। ওই সেতুর মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বৃহস্পতিবার ওয়েনাড়ের বিপর্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। তিনি রাতেই জানান, দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আর কেউ জীবিত অবস্থায় আটকে নেই। এখন বাকি শুধু দেহ উদ্ধারের কাজ। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। ভূমিধসে ৩৫০টির বেশি বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ওয়েনাড়ে এই মুহূর্তে ৪০টি উদ্ধারকারী দলের ১৬০০-র বেশি আধিকারিক কাজ করছেন।
গত তিন দিন ধরে ওয়েনাড়ে বার বার উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়েছে। বিরূপ আবহাওয়াই উদ্ধারকাজে মূল প্রতিবন্ধক। কারণ, এখনও বৃষ্টি চলছে ওয়েনাড় এবং সংলগ্ন এলাকায়। তার মাঝেই দেহ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার ওয়েনাড়ে গিয়েছিলেন প্রাক্তন সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং তাঁর বোন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। তাঁরা দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন। রাহুল বলেছেন, ওয়েনাড়ের পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে তাঁর বাবার মৃত্যুর সময়ের অনুভূতির কথা মনে পড়ে গিয়েছে।
ভূমিধস নিয়ে কেরল সরকারকে আগে থেকে সতর্ক করা হয়েছিল বলে সংসদে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে আগেভাগেই সেখানে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন’টি দল পাঠানো হয়েছিল বলে জানান তিনি। কিন্তু সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে কেরল সরকার। বিজয়ন জানিয়েছেন, আদৌ কেন্দ্র আগে থেকে কোনও সতর্কবার্তা পাঠায়নি। রাজনৈতিক তরজার মাঝেই অবশ্য উদ্ধারকাজে কেন্দ্র কেরল সরকারের পাশেই আছে বলে জানিয়েছে।