দলিত ছাত্রের আত্মহত্যা

উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে সরব পড়ুয়ারা

প্রতিবাদে মিলে গেল হায়দরাবাদ আর পুণে। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা ঘিরে এখন তোলপাড় ছাত্র রাজনীতির অঙ্গন। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগে আপত্তি জানিয়ে পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এর (এফটিআইআই) পড়ুয়ারা গত বছর আন্দোলন করেছেন ১৩৯ দিন ধরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৮
Share:

প্রতিবাদ দিল্লিতে। মঙ্গলবার ছবি: পিটিআই

প্রতিবাদে মিলে গেল হায়দরাবাদ আর পুণে। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা ঘিরে এখন তোলপাড় ছাত্র রাজনীতির অঙ্গন। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগে আপত্তি জানিয়ে পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এর (এফটিআইআই) পড়ুয়ারা গত বছর আন্দোলন করেছেন ১৩৯ দিন ধরে। এ বার তাঁরা হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়েরও পাশে দাঁড়ালেন। এফটিআইআই-এর গেটে এক দিনের প্রতীকী অনশনে বসেন পড়ুয়ারা। এফটিআইআই স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হরিশঙ্কর নাচিমুথু বলেন, ‘‘রোহিত ভেমুলার মৃত্যুর প্রতিবাদে আমরাও একজোট।’’ প্রথমে আট জন ছাত্র অনশন শুরু করেন। পরে যোগ দেন আরও অনেকে।

Advertisement

এফটিআইআই-এর অন্য আর এক সংগঠনের নেতা যশস্বী মিশ্র বলেন, ‘‘রোহিত ভেমুলার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের হাতে খুন (ইনস্টিটিউশনাল ডেথ) ছাড়া আর কিছুই নয়। যে মতাদর্শের কারণে এই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা ঘটল, তার সঙ্গেই আমাদের লড়াই। জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার জন্য যাঁরা আন্দোলন করছেন, আমরা তাঁদের পাশে আছি।’’ ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে সরকার যা করছে তার নিন্দাও করেন তিনি।

আর এই প্রতিবাদের অঙ্গন থেকে রাজনীতিকে দূরে রাখতে চেয়ে এ দিন বার্তা দিয়েছেন হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। আজ সেখানে যান রাহুল গাঁধী। তিনি পৌঁছতেই ছাত্ররা জানিয়ে দেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি চান না। রাহুল তাঁদের বোঝান, তিনি রাজনীতিক হিসাবে নন, এক জন যুবক, এক জন সহমর্মী হিসেবে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে এসেছেন।

Advertisement

এর পরে ছাত্রদের সুরেই তিনি দাবি তোলেন, ‘‘ছাত্রদের দু’টি ন্যায়সঙ্গত দাবি রয়েছে। প্রথমত, রোহিতের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া। দ্বিতীয়ত, দোষীদের শাস্তি দান।’’ যা দেখে বিজেপি শিবিরের মত, এটা ঠিকই যে দলিত ছাত্রটির মৃত্যু ঘিরে বিজেপি বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে নিঃস্ব রাহুল গাঁধী তথা কংগ্রেস এখন এই ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এ ধরনের নিম্নমানের রাজনীতি করছেন।

প্রতিবাদ গত কাল শুরু হয়েছিল হায়দরাবাদ থেকেই। রোহিতের মৃত্যুতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কয়েক জন প্রতিবাদীর সঙ্গে ধর্নায় বসেছিলেন ওই দলিত ছাত্রের মা। উপাচার্য পদত্যাগ না করলে তিনিও সেখান থেকে নড়বেন না বলে জানিয়েছেন। তবে উপাচার্যের বক্তব্য, তিনি পদত্যাগ করবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘একটা ঠিকঠাক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সব কিছু হওয়া উচিত। শান্ত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যদি কোনও আদর্শ কমিটি পুরো বিষয়টি বিবেচনার পরে মনে করে আমি কোনও ভুল করেছি, তবেই ইস্তফার প্রশ্ন ওঠে।’’

গত কাল সকালে রোহিতের দেহ হস্টেলের ঘরে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এ দিন উপাচার্য আপ্পা রাওয়ের ইস্তফা চেয়ে প্রতিবাদের সুর আরও চড়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে এ দিন পড়ুয়াদের সঙ্গে সংঘর্ষও বাধে পুলিশের। পড়ুয়াদের সংগঠনের একটি মঞ্চের তরফে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। হায়দরাবাদের রামনগরে কেন্দ্রীয় শ্রম ও রোজগার মন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়র বাড়ির বাইরেও বিক্ষোভ দেখান আন্দোলনকারীরা। টিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, সেখান থেকে প্রতিবাদীদের সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে বলে দাবি একটি সূত্রে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের তৈরি করা যৌথ অ্যাকশন কমিটির তরফে অর্পিতা নামে এক ছাত্রী জানান, উপাচার্য পদত্যাগ না করলে কোনও ক্লাস হবে না। কমিটিও রোহিতের মৃত্যুকে প্রতিষ্ঠানের হাতে খুন (ইনস্টিটিউশনাল ডেথ) বলেই মনে করে।

হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় পুণের পাশাপাশি সরব দিল্লি, মুম্বই ও চেন্নাইও। যন্তর মন্তর এবং কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সামনে আজ কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি সমর্থিত বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বন্দারু দত্তাত্রেয় এবং আপ্পা রাওয়ের ইস্তফা চেয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement