national

দু’বছর পরে ‘রাজকন্যা’র জন্য নতুন জামা কিনে কাঁদলেন ভিখিরি বাবা

রহমতের কথা মনে আছে? বিভুঁই থেকে আসা সেই কাবুলিওয়ালা। ছোট্ট মিনিকে দেখে যাঁর ভিন্‌দেশে থাকা নিজের সন্তানের কথা মনে পড়ে যেত। আর সে কারণেই তিনি নানা উপহার নিয়ে বারে বারে ছুটে যেতেন মিনিদের বাড়িতে। অপত্য এক স্নেহই তাঁকে টেনে নিয়ে যেত! সন্তান-স্নেহ। রবীন্দ্রনাথ সে ধাঁচেই এঁকেছিলেন রহমতের চরিত্র।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৭ ১০:২৮
Share:

রহমতের কথা মনে আছে? বিভুঁই থেকে আসা সেই কাবুলিওয়ালা। ছোট্ট মিনিকে দেখে যাঁর ভিন্‌দেশে থাকা নিজের সন্তানের কথা মনে পড়ে যেত। আর সে কারণেই তিনি নানা উপহার নিয়ে বারে বারে ছুটে যেতেন মিনিদের বাড়িতে। অপত্য এক স্নেহই তাঁকে টেনে নিয়ে যেত! সন্তান-স্নেহ। রবীন্দ্রনাথ সে ধাঁচেই এঁকেছিলেন রহমতের চরিত্র।

Advertisement

ভারতীয় সাহিত্যে বাবা-সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে কম লেখা হয়নি। এখনও হয়। আর ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর তো সেই কবেই লিখে গিয়েছেন বাবাদের মনে লালিত কথাটি, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’। সন্তানের প্রতি পিতার অপত্য স্নেহের সন্ধান এ বার মিলল সোশ্যাল মিডিয়াতেও। বাপ-মেয়ের সেই গল্প ‘ভার্চুয়াল’ দুনিয়ায় এখন রীতিমতো ভাইরাল।

গল্প হলেও আসলে সত্যি সেই কাহিনি!

Advertisement

জিএমবি আকাশ নামে এক সাংবাদিক বাপ-মেয়ের ওই ‘কাহিনি’ নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন। ৫ এপ্রিল পোস্ট হওয়া সেই ‘গল্প’ এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ পড়েছেন। ওই পোস্টটিতে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ। আর শেয়ার? নেই নেই করে ১১ হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে।

মহম্মদ কাওসার হোসেন। ফুটপাথবাসী। ভিক্ষাজীবী বাবা। মেয়ের জন্য জামা কিনতে গিয়েছিলেন শহরের এক দোকানে। দাম হিসেবে তিনি ৬০টি পাঁচ টাকার নোট তুলে দেন দোকানির হাতে। জামার দাম এই ভাবে খুচরোয় পেয়ে দোকানদার কাওসারকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি কি ভিখিরি?’’ দোকানদারের প্রশ্ন শুনে কেঁদে ফেলে কাওসারের বছর ছয়েকের মেয়ে সুমাইয়া। বাবার হাত ধরে টেনে সে বলতে থাকে, ‘‘আমার কিচ্ছু চাই না। বাবা, তুমি চলো এখান থেকে।’’ মেয়ের চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে দোকানদারকে শান্ত স্বরে কাওসার জবাব দেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি ভিখিরি।’’ এর পর মেয়ের পছন্দের হলুদ ফ্রকটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দোকান থেকে।

বছর দুয়েক পরে এটাই সুমাইয়ার জন্য কেনা একমাত্র নতুন জামা। বাবার মনে তখন আনন্দ আর ধরে না! গায়ে চাপানো হাফ-হাতা শার্টটার ডান হাতাটা হাওয়ার হাল্কা দুলছে। ওই হাতটা যে নেই কাওসারের! বাঁ হাত বাড়িয়ে শহরের বড় রাস্তার ক্রসিং-এ দাঁড়িয়ে ভিক্ষে করেন তিনি। আজন্ম অবশ্য এমনটা ছিলেন না। কাওসারের কথায়, “বছর দশেক আগের সেই ঘটনা মনে পড়লে আজও আতঙ্কে শিউরে উঠি। দুর্ঘটনায় আমার ডান হাতটা কাটা যায়। আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি এই ভাবে ভিক্ষে করে বেঁচে থাকতে হবে।’’ মেয়ে সুমাইয়া তাঁকে খাইয়ে দেয়। তাঁকে কখনও একলা ছাড়ে না। মেয়ে তাঁকে বলে, ‘‘এক হাতে সব কাজ করা কতটা কঠিন তা আমি জানি।’’ কাওসার যখন ভিক্ষে করেন, মেয়ে তখন তাঁর পাশেই থাকে। কাওসার বলেন, ‘‘মেয়ের সামনে এ ভাবে লোকের কাছে হাত পাততে আমার খুব লজ্জা করে! তবু, কী করব!”

আরও পড়ুন: সেরা শিশুশিল্পীর জাতীয় পুরস্কার দেগঙ্গার দস্যিদের

সারা দিন ভিক্ষে করে দুটো মানুষের খোরাক জোগাড়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের ভবিষ্যতও সাধ্যমতো গড়তে তত্পর কাওসার। অবৈতনিক স্কুলে পড়াশোনা করে ছোট্ট সুমাইয়া। মেয়ের প্রয়োজনীয় বই, খাতাপত্রও সুযোগ মতো কিনে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। সুমাইয়ার নতুন জামা কিনে আজ আর বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়াননি কাওসার। গর্বিত বাবা বলেন, “আজ আর ভিক্ষে নয়! দু’বছর পর মেয়েকে একটা নতুন জামা কিনে দিতে পেরেছি আজ। ওই জামা পরে ও কিছু ক্ষণ খেলুক আমার সামনে। আজ ওর বাবা আর ভিখিরি নয়। সে রাজা। আর ও আমার একমাত্র রাজকন্যে।”

সন্তান-স্নেহের কাছে রহমত, কাওসার সকলেই যে বড় অসহায়। বড় আপ্লুত!

এই পোস্টের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। জিএমবি আকাশের পোস্টে যেমনটা লেখা হয়েছে, তেমনটাই প্রকাশ পেয়েছে সংবাদ মাধ্যমে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement