এ ভাবেই জলকাদা পেরিয়ে উদ্ধারকাজ চালিয়েছে ওড়িশা পুলিশ। ছবি: ওড়িশা পুলিশের টুইটার হ্যান্ডল থেকে সংগৃহীত।
সবকিছু মিটে যাওয়ার পর পৌঁছয় বলে দুর্নাম রয়েছে পুলিশের। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ফণীর দাপটে যখন চারদিক বিধ্বস্ত, সেই মুহূর্তে ওড়িশা পুলিশ যে ভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে, তাতে তাদের কুর্নিশ না জানিয়ে পারলেন না রাজ্যবাসী।
বঙ্গোপসাগরে ফণীর গতিবিধির উপর শুরু থেকেই নজর ছিল আবহাওয়া দফতরের।প্রথমে অন্ধ্রপ্রদেশ হয়ে বাংলাদেশ চলে যাওয়ার কথা ছিল ঘূর্ণিঝড়ের। কিন্তু ঝড়ের গতিপথ বদলাতে দেখেই সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
তাই শুক্রবার সকালে ওড়িশা উপকূলবর্তী এলাকায় তীব্র গতিতে ঝড় আছড়ে পড়লেও, ১৯৯৯-এর সুপার সাইক্লোনের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনীকেই তার কৃতিত্ব দিয়েছেন সেখানকার সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন: ‘কর্মফলের জন্য প্রস্তুত হোন’, মোদীকে পাল্টা তোপ রাহুলের
ওড়িশা পুলিশের তরফে দুর্যোগ সামাল দিতে ব্যস্ত পুলিশকর্মীদের একাধিক ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয়েছে। তাতে কোথাও বয়স্ক মানুষদের কোলে তুলে ত্রাণ শিবিরে পোঁছে দিয়ে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। কোথাও আবার রাস্তার উপর ভেঙে পড়া গাছ টেনে সরাতে দেখা গিয়েছে। মোটরবাইকের পিছনে দুই মহিলাকে নিয়ে নিরাপদে আশ্রয়ে পৌঁছে দিতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রাপড়ার তালচুয়া থানার এক মহিলা পুলিশকর্মীকে। এমনকি জল-কাদা ঠেঙিয়ে একটি দুধের শিশুকে কোলে নিয়ে, তার গোটা পরিবারকে পথ দেখিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়ার ছবিও সামনে এসেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই সব ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তাতে রাজ্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বহু মানুষ। দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন পুলিশের।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রকোপে ওড়িশায় ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বহু মানুষ। পুরী এবং খুরদার মতো বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুত্ টেলিফোন পরিষেবা একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও প্রচুর কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। উপরে গিয়েছে গাছপালা। তবে যতটা ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, প্রশাসনিক তত্পরতার জেরে তা অনেকটাই এড়ানো গিয়েছে বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি।
আরও পড়ুন: নিজের মেয়েকে ৬ বছর ধরে নিয়মিত ধর্ষণ, দু’বার গর্ভপাত, পুলিশের জালে ধর্ষক বাবা
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পাওয়া মাত্রই মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ১২ লক্ষ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। স্থানীয় মানুষদের সতর্ক করতে মোবাইলে প্রায় ২৬ লক্ষ মেসেজ পাঠানো হয়। দুর্যোগ সামাল দিতে নামানো হয় ৪৩ লক্ষ স্বেচ্ছাসেবক। টেলিভিশন ও রেডিয়োয় বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত কাজে নামানো হয় আরও এক হাজার কর্মীকে। ৪৫ জন করে সদস্যের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৬টি অতিরিক্ত দল এসে পৌঁছয় রাজ্যে। আগাম এই প্রস্তুতির জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জেও প্রশংসিত হয়েছে ওড়িশার নবীন পট্টনায়কের সরকার।