গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ওডিশার উপর ফণীর সঙ্কট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। তীব্র ঘূর্ণিঝড় (সিভিয়ার সাইক্লোন)-এর আকার নিয়ে ওডিশা উপকূলের দিকে এগোচ্ছে ফণী। চেন্নাই থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। ৩ মে ১৯৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন।
আবহ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা ক্যাটেগরি ২ মাপের ঘূর্ণিঝড়। এই ক্যাটেগরিতে ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯-১১৭ কিলোমিটার। সোমবার সন্ধ্যাতেই শক্তি বাড়িয়ে ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’-এ পরিণত হয়েছে ফণী। মৌসম ভবন জানিয়েছে, যত উপকূলের দিকে এগোচ্ছে শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড়টি। বুধবারে এটা ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’-এ পরিণত হয়ে আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মৌসম ভবন।
ফণী যদি ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’-এ পরিণত হয়, তা হলে এর ধ্বংস ক্ষমতা বহু গুণ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আবহ বিজ্ঞানীরা।
‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ ক্যাটেগরি ৪ মাপের ঘর্ণিঝড়। যার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬৬-২২০ কিলোমিটার। মৌসম ভবন দু’দিন আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল যে ভাবে শক্তি সঞ্চয় করতে করতে এগোচ্ছে ফণী, তাতে এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’-এ পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র জানান, গত ১২৬ বছরের (১৮৯১-২০১৭) মধ্যে দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় এটি, যার উত্পত্তি এপ্রিলে এবং বঙ্গোপসাগরের উপর। প্রথমটি এসেছিল ২০০৮-এ। সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘নার্গিস’।
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসা ফণীর প্রভাব পড়তে পারে এ রাজ্যেও
আরও পড়ুন: ঘনিয়ে আসছে বিপদ, দেখে নিন কতটা ধ্বংসাত্মক হতে পারে ফণী
পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনীকে। ছবি সৌজন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর টুইটার।
উপকূলীয় ওডিশা, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশাখাপত্তনম ও চেন্নাইয়ে নৌবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ফণীর প্রতি মুহূর্তের গতিবিধির উপর নজর রেখে রাজ্য প্রশাসনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবারেই ক্যাবিনেট সচিবকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কোথায় কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে বা আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা কী নেওয়া হবে তা নিয়ে ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি মঙ্গলবার বৈঠক করবে বলে সূত্রের খবর।
ফণীর প্রভাবে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এবং কেরলের কিছু অংশে মঙ্গলবার থেকেই ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। ওডিশা সরকার উপকূলীয় গঞ্জাম, পুরী এবং কেন্দ্রাপাড়া জেলায় সমস্ত সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে। ৮৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে সরকার। সেখানে প্রায় ১০ লক্ষ লোক আশ্রয় নিতে পারবেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। রাজ্যের স্পেশাল রিলিফ কমিশনার বিষ্ণুপদ শেঠি বলেন, “মৌসম ভবন পূর্বাভাস দিয়েছে ৩ মে পুরী জেলার উপর আছড়ে পড়তে পারে ফণী। জেলাশাসকদের সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ শিবিরগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর সঙ্কট খানিকটা কাটলেও ওডিশার দিকে কিন্তু নজর রাখছেন আবহবিদরা। মৌসম ভবন জানিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে ফণী আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা কমেছে। তবে ওডিশায় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।