ফাইল চিত্র।
ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিআরপি পাঠানো নিয়ে রাজ্য সরকার তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। এই আবহে রাজ্য থেকে প্রথমে তাদের মহিলা বাহিনীর দু’টি কোম্পানিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন সিআরপি-র শীর্ষকর্তারা। সিআরপি-র ওই দু’টি কোম্পানি এখন ঝাড়গ্রাম জেলায় মোতায়েন। একটি কোম্পানি জেলা সদরে, অন্যটি বেলপাহাড়ি এলাকার একটি শিবিরে রয়েছে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর।
তবে সিআরপি ওই দু’টি কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছত্তীসগঢ়ে সরিয়ে নিলেও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের আশঙ্কা থাকছে না। কারণ, ওই দু’টিই ‘ট্রেনিং কোম্পানি’। পুরোদস্তুর কোম্পানি বলতে যা বোঝায়, তা নয়। অর্থাৎ, সিআরপি-র ২০০-র কাছাকাছি ওই মহিলা জওয়ান এই রাজ্যে প্রশিক্ষণের আওতায়। অবশ্য প্রশিক্ষণ প্রায় শেষের পথে। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, মাস আটেক আগে সিআরপি-র প্রমীলা জওয়ানদের ওই দু’টি কোম্পানি ঝাড়গ্রামে পৌঁছয়।
সিআরপি-র এক শীর্ষকর্তা মঙ্গলবার জানান, ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানতে অন্য রাজ্যে মাওবাদী মোকাবিলায় মোতায়েন জওয়ানদের একাংশকে নেওয়া হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ছত্তীসগঢ়ে সিআরপি-র মহিলা জওয়ানদের কোনও কোম্পানি নেই। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে দুই কোম্পানি মহিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ শেষের মুখে। সেটা বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।’’
রাজ্যের পাঁচটি জেলা— বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে সিআরপি-র মোট ৩২টি কোম্পানি শিবির করে রয়েছে। এক-একটি কোম্পানিতে জওয়ানের সংখ্যা প্রায় ১০০। তবে মহিলা জওয়ানদের ওই দু’টি ‘ট্রেনিং কোম্পানি’ এদের বাইরে। একটি রাজ্যে কত সিআরপি মোতায়েন, সেই হিসেবে কখনও ‘ট্রেনিং কোম্পানি’-কে ধরা হয় না। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘সিআরপি-র মহিলাদের দু’টি কোম্পানি এখান থেকে চলে গেলেও অসুবিধের কিছু নেই। জঙ্গলমহলে রাজ্য পুলিশে মহিলা রয়েছেন পর্যাপ্ত সংখ্যায়, তাঁরাও বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত।’’
গত ২৪ এপ্রিল সুকমায় মাওবাদী হামলায় ২৫ জন সিআরপি জওয়ান নিহত হন। তদন্তে বেরোয়, হামলায় বড় ভূমিকা নিয়েছিল মাওবাদীদের মহিলা স্কোয়াড। কাঠের বোঝা মাথায় করে হাঁটা ওই মহিলাদের সাধারণ গ্রামবাসী ঠাউরে ভুল করেছিলেন জওয়ানরা। কাঠের বোঝায় লুকোনো স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বার করে গুলি বর্ষণ শুরু হয়েছিল জওয়ানদের উপর।
কেন্দ্রীয় আধা সেনার কর্তারা মনে করছেন, মাওবাদীদের প্রমীলা বাহিনী গুলি চালালে পুরুষ জওয়ানেরা পাল্টা গুলি চালাবেন, সে ক্ষেত্রে অসুবিধে নেই। কিন্তু হামলা যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করার অন্যতম কৌশল হতে পারে মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে স্থানীয় বাসিন্দাদের যখন-তখন তল্লাশি। তবে পুরুষ জওয়ানদের দিয়ে মহিলাদের তল্লাশিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। যেটা মহিলা জওয়ানেরা থাকলে এড়ানো যাবে। সিআরপি-র কর্তাদের আশা, মাওবাদী গতিবিধির জরুরি তথ্য পেতেও মহিলা জওয়ানেরা কার্যকর হবেন।