প্রতীকী ছবি।
আর তিন বছরের মধ্যে মূল্যহীন হয়ে পড়বে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড। এটিএম ব্যবস্থাও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। বেঙ্গালুরুতে আয়োজিত প্রবাসী ভারতীয় দিবসে এমনই জানালেন নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত। তাঁর দাবি, ২০২০ সালের মধ্যে আর্থিক লেনদেনকে ভারত সরকার এতটাই ডিজিটাল করে তুলবে যে নগদ তো দূরের কথা, কার্ড বা এটিএম ব্যবস্থাও আর কোনও কাজে লাগবে না। আর্থিক লেনদেন হবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে। নোট বাতিলের পরে কি এ বার এটিএম বাতিলের কথাও ভাবতে শুরু করে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার? জল্পনা শুরু হয়েছে নীতি আয়োগ সিইও-র বয়ানে।
অমিতাভ কান্তের দাবি, নোট বাতিলের পর দেশের মানুষ ডিজিটাল লেনদেনে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তিনি জনান, নেট ব্যাঙ্কিং, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, এটিএমের ব্যবহার আগের চেয়ে এক লাফে অনেকটা বেড়েছে। এর পরই নীতি আয়োগ সিইও জানান, এ বার আর একটা বড় লাফ দিতে চলেছে ভারত। যার ফলে ২০২০ সালের মধ্যে লেনদেনের এই মাধ্যমগুলোও অনাবশ্যক হয়ে পড়বে। উঠে আসবে আরও প্রযুক্তিনির্ভর উপায়— বায়োমেট্রিক লেনদেন।
বায়োমেট্রিক লেনদেনের সুবিধা কী কী, তাও এ দিন ব্যাখ্যা করেছেন অমিতাভ কান্ত। তিনি জানান, এই পদ্ধতিতে মাত্র ৩০ সেকেন্ডেই খুব সহজে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হবে। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের চেয়ে বায়োমেট্রিক লেনদেন অনেক সুরক্ষিত বলে অমিতাভ কান্ত এ দিন জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, কার্ড আর পিন হাতিয়ে নিয়ে অ্যাকাউন্ট সাফ করে দেওয়া খুব সহজ। কিন্তু বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে গ্রাহকের দেহের কোনও নির্দিষ্ট অংশ স্ক্যান করে তবেই লেনদেন হয়। তাই এই লেনদেন অনেক সুরক্ষিত। কিন্তু কার্ডের লেনদেনেই এখনও ঠিক মতো অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি যে বিস্তীর্ণ গ্রামীণ ভারত, আগামী তিন বছরের মধ্যে সেই গ্রামীণ ভারতকে এক লাফে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে লেনদেন করতে বাধ্য করলে ফল কি ভাল হবে? এই প্রশ্ন উঠছেই। অমিতাভ কান্ত অবশ্য নিজের ভাষণেই সে প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, দেশে ইতিমধ্যেই ভিম অ্যাপ চালু হয়েছে। বায়োমেট্রিক আধার কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগও তৈরি করা হয়েছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে গ্রামীণ ভারত বেশ স্বচ্ছন্দ বলেও তিনি দাবি করেছেন। কেন্দ্র নাকি সমীক্ষা করে তা জানতে পেরেছে।
নীতি আয়োগের সিইও এ দিন জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করতেই বায়োমেট্রিক লেনদেনের দিকে ঝুঁকছে সরকার। তিনি জানান, দেশের নাগরিকের মাত্র ২ থেকে ২.৫ শতাংশ আয়কর দেন। বাকিটা আয়কর দেননা। এই বাকি অংশের আর্থিক লেনদেনের উপরে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এই বড় অংশটার উপরে নিয়ন্ত্রণ আনা গেলে দেশের অর্থনীতিও অনেকটা সাবলীল হয়ে উঠবে। দেশের অর্থনীতি নন-ফর্ম্যাল (যে অংশের উপরে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই) থেকে ফর্ম্যাল ইকোনমিতে বদলনোর জন্য বায়োমেট্রিক লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে সরকার। তার উপর আমেরিকা বা ইউরোপের থেকে ভারতে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যাটাও অনেক বেশি। যে কোনও প্রযুক্তিজনিত ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্ম তুলনামূলক অনেক বেশি সাবলীল হয়ে থাকে। সেই সুযোগটাকেও কাজে লাগাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।