অখিলেশ যাদব ফাইল চিত্র।
সরাসরি কোনও জোট বা সমঝোতা হয়নি। কিন্তু বাংলার দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএমকে বিজেপি-বিরোধিতার সূত্রে এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের ভোট।
অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টিই (এসপি) যোগীর রাজ্যে বিজেপিকে হারাতে পারবে, এই বিশ্বাস ও যুক্তি থেকে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি তৃণমূল। তারা সমর্থন করছে এসপি-কেই। সিপিএম এবং বামেরাও রাজ্যের অধিকাংশ আসনে এসপি-রই পাশে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের সাংগঠনিক অস্তিত্ব অনুযায়ী হাতে গোনা কিছু আসনে তাদের নিজেদের প্রার্থী থাকছে। বিজেপিকে রুখতে বামেদের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীও।
অখিলেশের সমর্থনে লখনউয়ে প্রচারের ফাঁকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে আমাদের লড়াই আছে। কিন্তু এখানে বিজেপিকে হারাতে হবে। আমরা অখিলেশের সঙ্গে। সিপিএমের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরাও পূর্ণ সমর্থন করছে।’’
একই যুক্তি সামনে রেখে উত্তরপ্রদেশ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হীরালাল যাদব বলছেন, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে যারা শক্তিশালী, তাদেরই সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। অধিকাংশ জায়গায় বিজেপির বিরুদ্ধে এসপি-ই প্রধান শক্তি। আমাদের যেখানে প্রার্থী নেই, সেখানে আমরা এসপি-কে সমর্থন করব। কিছু জায়গায় কংগ্রেস বা অন্য দলেরও উল্লেখযোগ্য শক্তি আছে। সেখানে তাদের সমর্থন করা হবে।’’
বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার আগেই সিপিএম জানিয়েছিল, তারা এসপি-র সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে চায়। হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যে বেশ কিছু জেলায় দুই কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন আছে, বিধানসভায় তাদের প্রতিনিধিও গিয়েছেন। কিন্ত ভোট ঘোষণার পরে এসপি নিজেদের মতো প্রার্থী ঘোষণা করতে শুরু করে দেওয়ায় বামেদের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা এগোয়নি। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, রাজ্যের মোট ৪০৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের মাত্র চারটিতে সিপিএমের প্রার্থী থাকছে। সিপিআই এবং ইন্ডিয়ান পিপল্স ফ্রন্ট (আইপিএফ) নামে একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে তারা অবশ্য ছোট একটি নির্বাচনী মঞ্চ গড়েছে। সিপিআই লড়ছে ৩৮টি আসনে, আইপিএফ প্রার্থী দিচ্ছে
তিন আসনে।
সিপিআইয়ের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সম্পাদক গিরীশ শর্মারও বক্তব্য, ‘‘বিজেপিকে পরাস্ত করতে হবে, এটাই বামপন্থীদের মূল লক্ষ্য। অহেতুক ভোট বিভাজনে আমরা যাচ্ছি না। নিজেদের সংগঠন ও স্বাধীন অস্তিস্তের কথা মাথায় রেখে অল্প কিছু আসনে আমরা প্রার্থী দিচ্ছি।’’
প্রয়াত কংগ্রেস নেতা কমলাপতি ত্রিপাঠীরই নাতি ললিতেশ-সহ কিছু নেতাকে দলে টেনে ভোটের অল্প কিছু দিন আগে উত্তরপ্রদেশে শাখা খুলেছে তৃণমূল। কিন্তু ময়দানের লড়াইয়ে তারা এখনও দাগ কাটতে পারেনি বলে তৃণমূলকে নিয়ে বিশেষ ভাবিত নন হীরালাল-গিরীশেরা। অখিলেশ এবং জয়ন্ত চৌধরীর (প্রয়াত অজিত সিংহের পুত্র) রাষ্ট্রীয় লোক দলের (আরএলডি) জোটের উপরেই বেশি ভরসা রাখছেন তাঁরা। এবং সেই অঙ্কই মিলিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল, সিপিএম, সিপিআইকে!