একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য ত্রিপুরায় নয়, আগামী পার্টি কংগ্রেস কলকাতায় করার কথা ভাবছেন সিপিএম কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটের ভরাডুবির পরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন বিরোধী পরিসর দখল করতে মরিয়া। ক্রমশই করুণ হচ্ছে সিপিএমের অবস্থা। এই সময় কলকাতায় পার্টি কংগ্রেসের আয়োজন করলে তাতে দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোবল ফেরানো ও সংগঠনকে চাঙ্গা করার সুযোগ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
দিল্লিতে সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠক শুরু হয়েছে আজ। সেই বৈঠকে আগামী বছরের পার্টি কংগ্রেস করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের নামই সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও সদ্যগঠিত তেলঙ্গানায় পার্টি কংগ্রেস করার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আগামী কাল এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পলিটব্যুরো। অগস্টে তাতে সিলমোহর দেবে কেন্দ্রীয় কমিটি।
লোকসভা ভোটের পরে জাতীয় রাজনীতিতে সিপিএমের গুরুত্ব কমেছে। রাজ্যস্তরেও তাদের সংগঠনের হাল ভাল নয়। দলের নেতারাই মানছেন, সিপিএমকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও কেরলকেই গুরুত্ব দিতে হবে। কেরলে পাঁচ বছর অন্তর পরিবর্তন হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর পরে বামেরা ক্ষমতা খুইয়েছে। সিপিএম এখনও সেখানে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াই দেওয়ার অবস্থায় আসেনি। এর ওপর বিজেপি চাইছে আগামী বিধানসভা ভোটেই এ রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠতে। সেই লক্ষ্য পূরণের আটঘাট বাঁধতে পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছেন নয়া বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। নতুন মুখকে সামনে এনে সংগঠন মজবুত করার অভিযানে নামছে বিজেপি। তাই হারানো জমি উদ্ধারে মরিয়া এখন সিপিএম নেতৃত্ব।
সিপিএম সূত্রে খবর, কলকাতায় পার্টি কংগ্রেস করার কথা ভাবার পিছনে অন্য একটি কারণ হল বিপুল খরচ। এই খরচ করার ক্ষমতা খুব কম রাজ্য নেতৃত্বেরই আছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া এ ক্ষেত্রে নাম করা যায় কেরলের। কিন্তু ঠিক আগের পার্টি কংগ্রেসই কেরলে হয়েছে। তার আগের দু’টি পার্টি কংগ্রেস হয়েছিল তামিলনাড়ু ও দিল্লিতে।
একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরার নামও বিবেচনা করা হয়েছিল। বিশেষ করে সদ্য হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল নামমাত্র খাতা খুললেও সেখানে বিপুল জয় পেয়েছে সিপিএম। কিন্তু সেখানে পার্টি কংগ্রেস করার ক্ষেত্রে ত্রিপুরার ভৌগোলিক অবস্থান একটা সমস্যা। হাজারেরও বেশি প্রতিনিধিকে বিমানে করে আগরতলায় নিয়ে যেতে হবে। এই দিকটির কথা ভেবে, ত্রিপুরায় দলের সম্মেলন করার প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য মনে করেননি সিপিএম নেতৃত্ব।
কলকাতায় সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস শেষ বার হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করতে দেয়নি দল। তাকে তিনি ‘ঐতিহাসিক ভুল’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। সেই পদক্ষেপ সত্যিই ভুল ছিল কি না, সেটাই ছিল ১৯৯৮ সালের পার্টি কংগ্রেসের মূল আলোচ্য। পার্টি কংগ্রেসের ক্ষেত্রে কলকাতার আর একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ১৯৬৪ সালে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদের ৩২ জন সদস্য দল ছেড়ে বেরিয়ে সিপিএম গঠন করেন। নতুন দলের পার্টি কংগ্রেস হয়েছিল কলকাতাতেই। তাতেই দলের প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরো তৈরি হয়েছিল।
দলের গঠনতন্ত্র মেনে আগামী পার্টি কংগ্রেসেই সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়তে হবে প্রকাশ কারাটকে। বিভিন্ন সময়ে যাঁর সঙ্গে বাংলার সিপিএম নেতাদের মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসতে দেখা গিয়েছে। সেই কারাটের বিদায়লগ্নে পার্টি কংগ্রেস আয়োজনের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ফের আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে দেওয়ার কথা ভাবছেন এটাও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন দলের অনেকে। তবে প্রশ্ন থাকছে, সত্যিই কি কলকাতায় পার্টি কংগ্রেস করে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে পারবে সিপিএম?