রাজ্য বিধানসভায় শাসক পক্ষের সঙ্গে তুমুল সংঘাতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল বিরোধী দলনেতাকে। কংগ্রেসের নেতাকে আগলাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাম বিধায়কেরা। দিল্লির দরবারে সেই তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেসের ত্র্যহস্পর্শ ঘটল বিজেপি-র মেরুকরণের রাজনীতির প্রতিবাদে!
ঘটনার সূত্রপাত সংসদের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আচমকাই বৈঠকে আলোচনা করতে চাওয়া হয়েছিল। শোনা মাত্র বাধা দেন সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁকে সমর্থন করেন তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন। সঙ্গত করেন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী। সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে আপত্তি মেনে নেন কমিটির চেয়ারম্যান পি চিদম্বরম। বৈঠকে অন্য সদস্যদের সঙ্গে সুর মিলিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ফেলেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।
জাতীয় স্তরে তা হলে তৃণমূলের সঙ্গে এক নৌকোতেই উঠল সিপিএম-কংগ্রেস? ইয়েচুরি ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘হ্যাঁ, উঠলাম! কিন্তু সেটা নির্দিষ্ট বিষয়ে। ইয়েচুরি প্রশ্ন তোলার পরে যুক্তিযুক্ত কারণেই তৃণমূল ও কংগ্রেস সাংসদেরা তাঁর আপত্তি সমর্থন করেছেন।’’ তিন দলেরই বক্তব্য, প্রস্তাবিত বিলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের জন্য নাগরিকত্ব সুগম করার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ইয়েচুরির প্রশ্ন, দেশের সংবিধানের মনোভাবের পরিপন্থী এমন কাজ কী ভাবে করে ফেলা হল? অন্য সংখ্যালঘুরা কেন বঞ্চিত হবেন? যৌথ সিলেক্ট কমিটির বিলটি বিবেচনা করার কথা। কমিটি সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রসচিব প্রথমে ভিন্ন মত জানাচ্ছিলেন। পরে সাংসদদের চাপ এবং কমিটির চেয়ারম্যানের আক্রমণের মুখে পিছু হঠেন।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের মনোভাব বৈষম্যমূলক ও মেরুকরণের রাজনীতি খুঁচিয়ে তোলার চেষ্টা বলে মনে করছেন ডেরেক এবং অধীরও। তবে তৃণমূলের এক সাংসদের দাবি, ‘‘প্রকৃত ওপেনিং ব্যাটসম্যান ছিলেন চিদম্বরম এবং ডেরেকই!’’ তৃণমূল সূত্রের দাবি, মোদী সরকারকে তোপ দেগে স্বরাষ্ট্রসচিবকে একাই ১০টা প্রশ্ন করেছেন চিদম্বরম। ডেরেক ৮টি। অধীরবাবু দু’টি। ইয়েচুরি, কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং জয় পাণ্ডা করেছেন একটি করে প্রশ্ন।
প্রশ্নের সংখ্যায় তফাত হতে পারে। কিন্তু বিজেপি-বিরোধী বৃত্তে এক বিন্দুতেই ছিল তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস।