বীজ বুনছে সঙ্ঘ, পার্টি কংগ্রেসে শিখবেন কারাটেরা

আগামী এপ্রিলে দলের পার্টি কংগ্রেসে আলোচনার জন্য যে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করেছে সিপিএমের পলিটব্যুরো, সেখানে আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে আরএসএস এবং তাদের প্রভাবিত নানা সংগঠনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৪:১১
Share:

পুরনো দিনে পার্টি ক্লাসে শেখানো হতো, জলের মধ্যে যেমন মাছ থাকে, সমাজে তেমন ভাবে মিশে যেতে হবে কমিউনিস্টদের। দিন বদলে বামেদের রাজনৈতিক প্রভাব যখন কমছে, তখন কিন্তু নীরবে মানুষের মধ্যে মিশে গিয়ে জমি তৈরি করে চলেছে সঙ্ঘ-প্রভাবিত নানা সংগঠন। কী ভাবে রাজ্যে রাজ্যে সঙ্ঘ কাজ করছে, এ বারের পার্টি কংগ্রেসে সেই শিক্ষার উপরে জোর দিতে চাইছে সিপিএম।

Advertisement

আগামী এপ্রিলে দলের পার্টি কংগ্রেসে আলোচনার জন্য যে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করেছে সিপিএমের পলিটব্যুরো, সেখানে আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে আরএসএস এবং তাদের প্রভাবিত নানা সংগঠনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা। দিল্লিতে বুধবার থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের বৈঠকে ওই রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হবে। দলীয় সূত্রের খবর, সেই সঙ্গেই সিপিএম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, সঙ্ঘের কাজকর্মের উপরে রাজ্যওয়াড়ি তথ্য পার্টি কংগ্রেসে নিয়ে যাওয়া হোক।

বস্তুত, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের আমলে দেশ জুড়ে সঙ্ঘের কত সংগঠন কাজ করছে, তার একটি প্রাথমিক সমীক্ষা করা হয়েছিল দলীয় স্তরে। বিশাখাপত্তনমে দলের ২১তম পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্টে তার উল্লেখও রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার কাজ বিশেষ এগোয়নি। ত্রিপুরার বিপর্যয়ের পরে এ বার এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাইছেন কারাটেরা। পাশাপাশিই বাংলার অভিজ্ঞতার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

কারাটের যুক্তি, ভোটের সময়ে কার সঙ্গে কী ভাবে জোট বেঁধে বিজেপির জয়রথ আটকানো যাবে, এই মুহূর্তে দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দল সেই আলোচনায় ব্যস্ত। কিন্তু বিজেপির নির্বাচনী সাফল্য সঙ্ঘের কঠোর পরিশ্রমের ফসল। সঙ্ঘ ৪০টিরও বেশি সংগঠনের মাধ্যমে একেবারে বিদ্যালয় স্তর থেকে স্বাস্থ্য পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে কাজ করছে। তারা এক ধরনের মানসিক গড়ন তৈরি করে দেওয়ার পরে বিজেপির পক্ষে ভোট পেতে সুবিধা হচ্ছে। সামাজিক স্তরে সঙ্ঘের এই কাজের মোকাবিলা করতে না পারলে শুধু ভোটে জোট করে দীর্ঘমেয়াদি কিছু হওয়ার নেই।

আরও পড়ুন: বিজেপি ভুগবেই, তির অখিলেশের

ত্রিপুরায় পরাজয়ের পরে পলিটব্যুরোয় মানিক সরকার যে প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছেন, সেখানেও বলা হয়েছে, ওই রাজ্যের পাহাড়ি বা জনজাতি এলাকায় সঙ্ঘ বহু বছর ধরে কাজ করছে। কিন্তু তারা এতটা প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে যে, একটু অনুকূল পরিস্থিতি পেতেই ভোটবাক্স গেরুয়া হয়ে উঠবে— তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘স্কুল, বস্তি, শ্রমিক মহল্লা— নানা জায়গায় সঙ্ঘের সংগঠন কাজ করছে। আমরা জেনেছি আগেই কিন্তু শিথিলতা দেখিয়েছি। সেটা আর চলবে না!’’

বাংলার সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, এ রাজ্যে অন্তত সাড়ে তিনশো স্কুলই চালাচ্ছে সঙ্ঘ। তৃণমূল মুখে নানা হুঁশিয়ারি দিলেও বাস্তবে তাদের কাজে গেরুয়া শিবিরের সুবিধেই হচ্ছে। সঙ্ঘ রামনবমী করলে তৃণমূলও তা-ই করছে! তাই বাংলার পরিস্থিতি আরও জটিল। এই গোটা বিষয়ই হায়দরাবাদে কাটাছেঁড়া করতে চান কারাটেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement