ফাইল চিত্র।
অনেকটা যেন লালকৃষ্ণ আডবাণীর পদত্যাগ ও অভিযোগ মুক্তির পুনরাবৃত্তি! এ বার সিপিএমে।
স্বজনপোষণে নাম জড়ানোয় গত বছর পদত্যাগ করতে হয়েছিল কেরলের শিল্পমন্ত্রী ই পি জয়রাজনকে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়রাজন ছিলেন পিনারাই বিজয়নের মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বছরখানেকের মাথায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর খারিজ করে দিয়েছে কেরল হাইকোর্ট। ভিজিল্যান্স দফতর আদালতেই হলফনামা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, জয়রাজন ‘বেআইনি’ কোনও কাজ করেননি এবং মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর ওই সিদ্ধান্তে কারও লাভবান হওয়ারও কোনও প্রমাণ নেই। আদালত থেকে ‘ক্লিন চিট’ পাওয়ার পরেই শুক্রবার তিরুঅনন্তপুরমে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে জয়রাজনকে ফের মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছে।
নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে শিল্পমন্ত্রী জয়রাজন তাঁর দুই নিকটাত্মীয়কে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় পদ পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর সেই দুই আত্মীয়ের মধ্যে এক জন আবার সিপিএমের সাংসদ পি কে শ্রীমতির ছেলে। বিতর্কের জেরে দু’জনের কেউই অবশ্য পদে যোগ দেননি। বিতর্কের চোটে তখন হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকেও। দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতেই শেষমেশ মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বিজয়ন-ঘনিষ্ঠ জয়রাজন। হাওয়ালা কেলেঙ্কারিতে এস কে জৈনের ডায়েরিতে নাম থাকায় নৈতিক দায় নিয়ে অতীতে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা আ়ডবাণী। অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে দু’বছর পরে ফিরে আসেন লোকসভায়। জয়রাজন-কাণ্ডেও একই রকম নৈতিকতার নজিরের কথা বলছে সিপিএম।
আরও পড়ুন: সঙ্ঘেই আছে সঙ্ঘ, বুঝিয়ে দিলেন মোহন
জয়রাজনকে আবার মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি না, সেই বিষয়ে অবশ্য কেরল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। দলের একটি সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা টমাস চান্ডিকে নিয়ে বিতর্ক মেটার আগে এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না বিজয়ন, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনেরা।
ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে নিজের লোক বসানোর পরেও কেন জয়রাজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এই প্রশ্ন তুলে এফআইআর হয়েছিল কোচিতে। ওই এফআইআর খারিজ করার দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জয়রাজন। ভিজিল্যান্স রিপোর্ট দেখার পরে আদালত বরং প্রশ্ন তুলেছে, প্রশাসন ওই এফআইআর গ্রহণই বা করল কেন? আদালতে গিয়ে নিষ্কৃতি পাওয়ার পরে জয়রাজন বলেছেন, ‘‘গোড়া থেকেই বলে এসেছিলাম, আমি কোনও অন্যায়ে জড়িত নই। তবু নৈতিকতার স্বার্থে ইস্তফা দিয়েছিলাম। এখন সব পরিষ্কার হয়ে গেল।’’ মন্ত্রিত্ব ফিরে পাওয়ার প্রশ্নে জয়রাজনের জবাব, এই ব্যাপারে দলই যা ঠিক করার, করবে।
কেরলের এই দৃষ্টান্ত তুলে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বিঁধছেন এ রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে। তাঁর কথায়, ‘‘এ রাজ্যে নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কেউ কোনও অভিযোগই নেয় না! ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে বলেন, আগে জানলে টিকিট দিতাম না। মুখ্যমন্ত্রীর জানার আগে অভিযুক্তদের মধ্যে যিনি মেয়র ছিলেন, জানার পরে তিনি মেয়রের পাশাপাশি মন্ত্রীও হয়ে যান!’’