সাম্প্রদায়িক বিজেপি-র মোকাবিলায় বাম এবং তৃণমূলের সমঝোতার সম্ভাবনা যে সোনার পাথরবাটি, তা স্পষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টায় নামল দু’পক্ষই। মঙ্গলবার কলকাতায় সিপিআই আয়োজিত এক আলোচনাসভায় সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি জানান, যে দল পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে মাথা তোলার সুযোগ করে দিয়েছে এবং যারা গণতন্ত্র মানে না, সেই তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লড়াই সম্ভব নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই দিল্লিতে জানান, রাজ্যে তিনি একাই লড়বেন। তিনি নির্বাচনী সমঝোতার কথা বলছেন না। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতা মোকাবিলায় ‘সমমনোভাবাপন্ন’ দলগুলিকে নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চ গড়তে চাইছেন শুধু।
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বেশি সরব হতে গিয়ে বামেরা তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই লঘু করে ফেলছে বলে অভিযোগ উঠছে। বিজেপি-র ভয়ে তিনি বামেদের কাছে ডাকছেন বলে প্রচার শুরু হওয়ায় মমতাও ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত। দিল্লিতে বিজ্ঞান ভবনে জওহরলাল নেহরুর জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের অবসরে মমতা বিজেপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ জোটে সিপিএম-সহ বামেদের পাশে চাওয়ায় বিতর্কের শুরু। এ দিন কলকাতার মৌলালি যুব কেন্দ্রে কমিউনিস্ট নেতা ভূপেশ গুপ্তের শতবর্ষে ‘ভারতে গণতন্ত্র কোন পথে’ শীর্ষক আলোচনাসভায় দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকে পাশে নিয়ে ইয়েচুরি বলেন, “নেহরুর জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে মমতার সঙ্গে আমার হাসি বিনিময়ের রাজনৈতিক তাৎপর্য খোঁজা অর্থহীন। তৃণমূল আমাদের কয়েকশো কর্মীকে খুন করেছে। ক্ষমতায় এসে কয়েক লক্ষ মানুষকে ঘরছাড়া করেছে। যে দল গণতন্ত্রই মানে না, তাদের সঙ্গে নিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব নয়।” মমতা যে বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন, তা মনে করিয়ে ইয়েচুরি বলেন, “সারদা কেলেঙ্কারি-সহ অন্য ঘটনায় তৃণমূল ভয় পেয়েছে। নিজেকে বাঁচাতে দিল্লিতে মমতা নানা কথা বলেছেন।” মমতাও বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছি মাত্র। তার মানে এই নয় যে জোট তৈরি করতে এসেছি। আমরা রাজ্যে একাই লড়ব। বাংলার মানুষের উপর আমার ভরসা রয়েছে। বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গে একই মঞ্চে থাকতে চাইছি।”
‘বৃহত্তর স্বার্থে’র ব্যাখ্যায় তৃণমূল নেত্রী বলেন, “এটা ভোটের রাজনীতির বিষয় নয়। দেশের সামনে এখন সাম্প্রদায়িকতা বড় বিপদ। মানবিকতার খাতিরে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ দল এক মঞ্চে এলে ভাল হয়।” মমতার বক্তব্য, ওই ধরনের মঞ্চে কে নেতৃত্ব দেবে, তিনি জানেন না। কলকাতার আলোচনাসভায় সিপিআই নেতা এ বি বর্ধন, রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার, ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস, আরএসপির ক্ষিতি গোস্বামী, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, এসইউসি-র প্রভাস ঘোষ-সহ ১৬টি দলেরনেতৃত্ব ছিলেন। বর্ধন বলেন, “সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লড়াইয়ে লালুপ্রসাদ, মুলায়ম-সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে সঙ্গে নিতে হবে।” দেবব্রত-ক্ষিতি-প্রভাসরা তা-ও চান না। ফলে, বিভ্রান্তিও বহাল!