রামনাথ কোবিন্দ
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাজ্যের ‘পনেরো ভূতের গল্পে’ এ বার বামেদের টেনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন বামেরাই। বামেদের বিজেপি-বিরোধিতাকে ‘মেকি’ আখ্যা দিয়ে তার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গও। মমতার কথায়, ‘‘এ রাজ্যে নকল রামের সঙ্গে জুটেছে বাম! সামনে লোক দেখানো গট-আপ লড়াই, আর ভিতরে ভিতরে বিজেপিকে ভোট দিচ্ছে ওরা।’’
তবে রাজ্য বিধানসভায় যে ভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী মীরা কুমারের ১৫টি নিশ্চিত ভোট নষ্ট হয়েছে, তা সহজ ভাবে নিচ্ছেন না কেউই। সবচেয়ে আশ্চর্যের, এখানে বিজেপি প্রার্থী ৫টি বাড়তি ভোট শুধু পেয়েছেন তা নয়। বাতিল ১০টি ভোটের মধ্যেও কোবিন্দের নামে পড়েছিল ৫টি। যাতে আরও বড় রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনেকের মতে, আসলে কি কোবিন্দকে পাঁচটি ভোট দেওয়া আর পাঁচটি নষ্ট করা— এই মর্মেই অমিত শাহদের সঙ্গে কথা হয়েছিল ‘বিশ্বাসঘাতক’দের? অন্তত বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্যে তার ইঙ্গিত যথেষ্ট। ফল ঘোষণার পরেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘ যা কথা ছিল, তাই হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: বাংলাছাড়া হবেন মমতাই: দিলীপ
কিন্তু এই ‘বিশ্বাসঘাতক’ কারা, তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই রাজনীতির অলিন্দে। মুখ্যমন্ত্রী ভোট ভাঙার দায় চাপিয়ে দিয়েছেন বামেদের ঘাড়ে। বামেরা আবার পাল্টা বলেছেন, নিজে যা করেছেন, এ বার সেটাই তাঁর কাছে ফিরে আসছে। তিনি এত দিন অন্যের দল ভেঙেছেন, এখন তৃণমূলের দলও ভাঙা শুরু হয়েছে। যদিও তৃণমূলের দাবি, তাঁদের কেউ কোবিন্দকে ভোট দেননি।
তা হলে ভোট দিলেন কে বা কারা— এই প্রশ্নে অবিশ্বাসের ছায়া দীর্ঘতর হচ্ছে তৃণমূল আর কংগ্রেসে। চর্চাও এই দুই দলেই বেশি। বিধায়করা ফিসফিসিয়ে বলছেন, ‘‘তা-ও তো বিজেপি বিশেষ চেষ্টা করেনি। যদি ঠিক মতো নামত, তা হলে কোবিন্দ ৫০টি ভোটও পেতে পারতেন!’’ অনেকে আবার জানিয়েছেন, বিধানসভাভিত্তিক ভোট না হয় জানা যায়, ফলে এ রাজ্যে কত জন বিধায়কের ভোট কোবিন্দ পেয়েছেন তা জানা গিয়েছে। কিন্তু ক’জন সাংসদ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, তা অজানা। বিজেপির অভ্যন্তরীণ হিসেব বলছে, যে রকম কথা হয়েছিল, সাংসদদের ক্ষেত্রে তার চেয়েও দু’একটি বাড়তি ভোট পাওয়া গিয়েছে। ফলে বিধানসভায় ১৫ ‘ভূতে’র সন্ধান মিললেও আসলে ‘ভূতে’র সংখ্যা আরও বেশি বলেই দাবি বিজেপির।