জওহরলাল নেহরু এবং জ্যোতি বসু। ফাইল চিত্র।
১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ জমানায় বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে এই দলের প্রার্থী হিসাবেই জিতেছিলেন জ্যোতি বসু। ইতিহাস বলছে, ১৯২৫ সালে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দেশের প্রাচীনতম এই কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৫২ সালে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে অন্যতম জাতীয় দলের মর্যাদা পেয়েছিল।
সেই নির্বাচনে জাতীয় দলের তকমা পাওয়া ১৪টি দলের অধিকাংশই হারিয়ে গিয়েছে। টিকে থাকা দলগুলির মধ্যে জাতীয় দলের তালিকায় ছিল শুধু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ (কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া বা সিপিআই)।
নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপে এ বার সিপিআই জাতীয় দলের তকমা হারানোর ফলে টিকে রইল শুধু কংগ্রেস। প্রসঙ্গত, সিপিআইয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসির একদা নেতৃত্বে ছিলেন লালা লজপত রায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এবং জওহরলাল নেহরু।
এ বি বর্ধন, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত এবং ডি রাজা। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
১৯৫২ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ১৬টি আসনে জিতে অন্যতম বিরোধী দল হয়েছিল অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)। কংগ্রেস এবং সিপিআইকে নিয়ে ওই নির্বাচনে জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেয়েছিল ১৪টি দল। সোমবার নির্বাচন কমিশন ছ’টি জাতীয় দলের যে তালিকা প্রকাশ করেছে মধ্যে ওই ১৪-র ১৩টিই অনুপস্থিত। টিকে রয়েছে শুধু কংগ্রেস। শুধু লোকসভা ভোট নয়, দেশের প্রধান অকংগ্রেস দল হিসাবে কেরলে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল সিপিআই।
কংগ্রেস এবং সিপিআই ছাড়াও স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচনে ১২টি দল জাতীয় দলের মর্যাদা পেয়েছিল। তার মধ্যে ছিল, ভারতীয় জনসঙ্ঘ (বিজেএস), বলশেভিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (বিপিআই), ফরওয়ার্ড ব্লক (মার্কসিস্ট গ্রুপ), ফরওয়ার্ড ব্লক (রুইকার গ্রুপ), অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা, কৃষিকর লোক পার্টি (কেএলপি), কিসান মজদুর প্রজা পার্টি, রেভলিউশনারি কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (আরসিপিআই), অখিল ভারতীয় রাম রাজ্য পরিষদ, রেভলিউশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টি (আরএসপি), অল ইন্ডিয়া শিডিউলড কাস্ট ফেডারেশন এবং সোশ্যালিস্ট পার্টি। এর মধ্যে পরবর্তী কালে জনসঙ্ঘ নাম বদলে হয়েছিল বিজেপি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ১৯৬৪ সালে অবিভক্ত সিপিআই ভেঙে জ্যোতি বসু, ইএমএস, নাম্বুদ্রিপাদ, হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ, বিটি রণদিভে, পি সুন্দরাইয়া, বাসবপুন্নাইয়া সিপিএম গড়ার পর সাংগঠনিক ভাবে জাতীয় স্তরে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল সিপিআই। তবুও ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, এবি বর্ধন, অচ্যুত মেনন, বাসুদেবন নায়ারদের নেতৃত্বে জাতীয় দলের মর্যাদা টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল সিপিআই। বিহার, উত্তর প্রদেশের মতো হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলিতে ‘কাস্তে-ধানের শিস’ ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী বাম দল।
কিন্তু সেখানে ধর্ম এবং জাতপাত ভিত্তিক রাজনীতির উত্থানে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ে দেশের সবচেয়ে পুরনো কমিউনিস্ট পার্টি। ডি রাজা, অতুল অঞ্জনদের জমানায় জাতীয় দলের মর্যাদাও হারাল সিপিআই।