ছবি— পিটিআই।
ভারতে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে চলেছে ‘সার্স-কভ-২’ ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। এতটাই যে, আর ১৫ দিনের মধ্যে দেশে দৈনিক কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ৫ হাজার ৬০০। তার ফলে ১২ এপ্রিল থেকে ১ অগস্টের মধ্যে দেশে কোভিডে মৃত্যু হতে পারে আরও প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের। আমেরিকার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট ফর হেল্থ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন (আইএইচএমই)’-এর সাম্প্রতিক গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। প্রায় একই রকমের ইঙ্গিত মিলেছে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়েরও একটি গবেষণায়। তাতে বলা হয়েছে, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতে দৈনিক কোভিড-মৃতের সংখ্যা বেড়ে হতে পারে সাড়ে ৪ হাজার। আর জুলাইয়ের শেষাশেষি সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়বে আরও ৮ থেকে ১০ লক্ষ।
কলকাতার বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই দু’টি দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত হননি। তাঁদের বক্তব্য, মানুষ বাইরে বেরলে মাস্ক পরবেন না, সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলবেন না, বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে স্যানিটাইজ করবেন না, কোভিড টিকা তেমন ভাবে দেওয়াই হবে না— এমন কয়েকটি পূর্ব ধারণা (‘অ্যাসাম্পশন’)-র ভিত্তিতেই এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অথচ গত এক সপ্তাহে পরিস্থিতি কিছুটা বদলে গিয়েছে। মানুষ মাস্ক পরে রাস্তায় বেরোচ্ছেন। কোভিড টিকাকরণের কাজও চলছে। ফলে এই দু’টি পূর্বাভাস মেলার সম্ভাবনা কম। তবে পরিস্থিতিতে সঙ্কটজনক, তা তাঁরা মেনে নিচ্ছেন।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএইচএমই-এর ‘কোভিড-১৯ প্রোজেকশন্স ইন ইন্ডিয়া, ২০২১’ শীর্ষক গবেষণাপত্রের দাবি, এপ্রিলের মাঝামাঝি কোভিডই ভারতে সবচেয়ে বেশি মানুষের রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পঞ্চম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ১২ এপ্রিল থেকে ১ অগস্ট পর্যন্ত ভারতে কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে চলেছে। তার ফলে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই দেশে দৈনিক কোভিড মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশি হবে। ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে যাবে সংক্রমণের হারও। তার ফলে ১২ এপ্রিল থেকে ১ অগস্টের মধ্যে ভারতে কোভিডে মৃতের সংখ্যা আরও প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার বাড়বে। যার পরিণতিতে জুলাইয়ের শেষাশেষি দেশে কোভিড-মৃতের সংখ্যা হবে ৬ লক্ষ ৬৫ হাজারের কিছু বেশি।
তবে মানুষ যদি মাস্ক পরার ব্যাপারে চোখে পড়ার মতো আগ্রহী হয়ে ওঠেন, টিকাকরণের প্রক্রিয়া যদি স্বাভাবিক থাকে, তা হলে কোভিড-মৃতের সংখ্যা পূর্বাভাসের চেয়ে ৭০ হাজার কমে যেতে পারে বলেও ওয়াশিটংন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা জানিয়েছে। একই সঙ্গে ভারতে টিকাকরণের গতিতে আশাপ্রকাশ করেছে এই গবেষণা।
গবেষণা জানিয়েছে, মাস্ক না পরা, সামাজিক দূরত্ববিধি না মেনে চলার খেসারত গুনতে গিয়ে এপ্রিলের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে সারা দেশে নতুন সংক্রমণের ঘটনা বেড়েছে ৭১ শতাংশ। আর দৈনিক কোভিড-মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।
কলকাতার জিন বিশেষজ্ঞ কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ন্যাশনাল সায়েন্স চেয়ার’ পার্থপ্রতিম মজুমদার অবশ্য দু’টি গবেষণার ফলাফল ও পূর্বাভাস মেনে নিতে রাজি হননি। একই অভিমত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীরও।
দু’জনেই জানাচ্ছেন, গবেষকরাও জানেন যে সব পূর্ব ধারণার ভিত্তিতে নানা ধরনের মডেলের উপর নির্ভর করে এই ধরনের গবেষণা চালানো হয়। এই গবেষণার ফল করোনা ঢেউ উত্তরোত্তর তীব্র হয়ে ওঠার পরপরই দ্রুত বদলে যেতে শুরু করে। কারণ মানুষ আগে বাঁচতে চান। তার ফলে নিজেরাই সতর্ক হয়ে পড়েন।
পার্থপ্রতিম বলছেন, ‘‘গত এক সপ্তাহেই দেখছি মানুষের সচেতনতা কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। মানুষ নিজে থেকেই মাস্ক পরতে শুরু করে দিয়েছেন। সামাজিক দূরত্ববিধিও মেনে চলার চেষ্টা করছেন। সরকারও স্বাভাবিক ভাবেই নতুন নতুন পদক্ষেপ করছে। টিকাকরণের কাজের গতিও মন্দ নয়। ফলে দু’টি গবেষণার পূর্বাভাস পুরো মিলবে, এমন বিশ্বাস আমার অন্তত নেই।’’
সুবর্ণ জানাচ্ছেন, প্রথম তরঙ্গ শুরু হওয়ার পর মানুষের সচেতনতা গড়ে তুলতে পুলিশ প্রশাসনকে যতটা ঘাম ঝরাতে হয়েছিল, এ বার ততটা হচ্ছে না। মানুষ কিছুটা সচেতন হয়েছেন। কারণ কী কী করতে হবে জেনে গিয়েছেন। তবে বর্তমানে কোভিড পরিস্থি্তি যে খুব উদ্বেগজনক, তা মানছেন তাঁরা।
পার্থপ্রতিম বলছেন, ‘‘ভোটের ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢল নামবে রাস্তায়। জনসমাবেশ বাড়বে। তাতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ ব্যাপারেও মানুষকে সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ করছি।’’